বঙ্গোপসাগরে আবারও বেপরোয়া জলদস্যুরা

কক্সবাজার, দেশের খবর

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার, বার্তা ২৪.কম | 2023-08-22 17:09:38

বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকুলে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জলদস্যু বাহিনী। কিছু জলদস্যু র‌্যাবের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করলেও এখনও চিহ্নিত জলদস্যুরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। শীত মৌসুমে প্রতিদিনই সাগরে জলদস্যুরা জেলে জিম্মি ও মারধর করছে বলে অভিযোগ জেলেদের।

জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে ফিশিং ট্রলারে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন কক্সবাজারের হাজার হাজার জেলে। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জন্য আতঙ্ক জলদস্যু।

যারা প্রতিনিয়ত খেটে খাওয়া এসব জেলেদেরকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে আসছে। ট্রলার মালিক মুক্তিপণের টাকা দিতে দেরি করলেই চলে মারধরসহ নানা নির্যাতন। যার ভয়ে এখন অনেক জেলে সাগরে মাছ আহরণে যেতে চাচ্ছেন না।

কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির হিসেব অনুযায়ী, গত দুই মাসে বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূলে দু'শতাধিক ছোট-বড় মাছ ধরার ট্রলার জলদস্যুদের হামলার শিকার হয়েছে। যাদের মধ্যে বেশীরভাগই গুলিবিদ্ধ হয়ে ফিরে এসেছেন।

গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে নিখোঁজ রয়েছে কক্সবাজারের ১৪ মাঝি-মাল্লা। নিখোঁজের ২৫ দিন পার হলেও এখনও তাদের সন্ধান মেলেনি। এভাবে চলতে থাকলে মৎস্য ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়ার আশঙ্কা করছেন।

এফবি আলম ফিশিং ট্রলারের মাঝি নুরুল আলম বলেন, চলতি মৌসুমে দ্বিতীয়বারের মত জলদস্যুদের নির্যাতনের শিকার হয়েছি। মারধর করে মাছ ও জাল নিয়ে গেছেন তারা। বলেছে সাগরে মাছ ধরতে হলে তাদের চাঁদা দিতে হবে। অন্যথায় তারা আমাদের নির্যাতন করবেন।

জেলে শফিউল আলম পরিবারের এক মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। কিন্তু সাগরে জলদস্যুদের হামলায় শিকার হওয়ার পর থেকে আর সাগরে যাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, প্রচণ্ড মারধর আর নির্যাতন করে জলদস্যুরা। এরপর থেকে বেকার বসে আছি। পরিবারে আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে। তারপরও মাছ আহরণে যেতে ভয় করছে।

এদিকে কক্সবাজারের পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও সদরের চিহ্নিত জলদস্যুরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় সাগরে জলদস্যুতা বন্ধ হচ্ছে না বলে দাবি জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির।

কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসাইন বার্তা ২৪.কমকে বলেন, চিহ্নিত জলদস্যুরা কেউ আত্মসমর্পণ করেনি বা ধরা পড়েনি। যার কারণে সাগরে শীত মৌসুম আসলেই দস্যুতা বেড়ে যায়। প্রতিদিন কোন না কোন ফিশিং ট্রলার তাদের হামলার শিকার হচ্ছে।

কোস্টগার্ড পুর্বজোনের অপারেশন অফিসার লে. কমান্ডার সাইফুল ইসলাম বার্তা ২৪.কমকে বলেন, জলদুস্য দমনে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে। কিছু জলদস্যু বাইরের এলাকা থেকে এসে কক্সবাজার উপকুলে হামলা করে পালিয়ে যাওয়ার খবর পাচ্ছি। এরপর থেকে অভিযান জোরদার করা হয়েছে।

র‌্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক মিমতানুর রহমান বার্তা ২৪.কমকে জানান, আত্মসমর্পণের পর কিছু নতুন জলদস্যু সাগরে জেলেদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে শুনেছি। তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের দমন করা হবে।

উল্লেখ্য যে, গত বছরের ২০ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপকূলীয় এলাকার ছয়টি জলদস্যু বাহিনীর ৪৩ সদস্য। এ সময় ৯৪টি অস্ত্র ৭ হাজার ৬৩৭টি গোলাবারুদ হস্তান্তর করে তারা। কিন্তু আত্মসমর্পণের পরও জলদস্যুদের তৎপরতায় উদ্বিগ্ন জেলেরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর