কেউ পায়চারি করছে মালপত্র নিয়ে, কেউ শুয়ে আছে কাঁথা মুড়িয়ে, কেউ আবার পুঁটলিতে হেলান দিয়ে শীতে জবুথবু হয়ে বসে আছে। মাঝে মধ্যে ট্রেনের হুইসেল শুনে কেউ এদিক-সেদিক তাকিয়ে উঠে নড়েচড়ে বসছে।
গতকাল শনিবার (২৬ জানুয়ারি) রাত সোয়া ১১টায় ময়মনসিংহের গৌরীপুর রেলওয়ে জংশনের টিকিট কাউন্টারের সামনের মেঝেতে অপেক্ষমান ট্রেন যাত্রীদের এই দৃশ্য দেখা যায়। স্টেশনের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্রামাগার বন্ধ থাকায় শীতের রাতে বাধ্য হয়েই ট্রেনযাত্রীরা প্লাটফর্মের ঠান্ডা মেঝেতে আশ্রয় নিয়েছে। ট্রেন না আসা পর্যন্ত শীত উপেক্ষা করে এভাবেই অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী ট্রেনযাত্রীরা।
জানা গেছে, গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশন হয়ে প্রতিদিন ঢাকা-জারিয়া, ঢাকা-মোহনগঞ্জ, ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম এই ৩টি রুটে আন্তনগর, মেইল, কমিউটার ও লোকালসহ ৩২টি ট্রেন চলাচল করে। এ সব ট্রেনে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী চলাচল করে। কিন্তু স্টেশনের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্রামাগার দুটি বেশির ভাগ সময় তালাবদ্ধ থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আবার হঠাৎ খোলা পাওয়া গেলেও এমন বেহাল অবস্থায় বিশ্রামাগার ব্যবহারে বিব্রত হয় যাত্রীরা।
শনিবার রাত ১১টায় গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্রামাগার দুটি তালাবদ্ধ। অপেক্ষমান ট্রেনযাত্রীদের অনেকেই স্টেশনের চায়ের দোকানে বসে সময় কাটাচ্ছে। আর নিম্ন আয়ের ট্রেনযাত্রীরা আশ্রয় নিয়েছে টিকিট কাউন্টারের সামনের মেঝেতে। এর মধ্যে ঠান্ডা মেঝেতে জবুথবু হয়ে কয়েকজন নারী যাত্রীকেও বসে থাকতে দেখা গেছে।
উপজেলার শাহগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা বসির উল্লাহ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘রাইতের ট্রেইনে ঢাকা যাইয়্যাম। ইস্টিশনে আইয়্যা দেহি বিশ্রামাগার তালা মারা। অহন মালপত্র লইয়্যা চায়ের দোকানে বইয়্যা রইছি। নীরব ইস্টিশন, তাই একটু একটু ডরও লাগতাছে।’
নেত্রকোনাগামী এক নারী ট্রেনযাত্রী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি মাইয়া মানুষ, রাইতের আইন্ধারে অ্যামনে বইয়া থায়ায় অনেক ডর লাগতেছে গো বাবা। ঘরডা খোলা থাকলে তো আর এই পেরেশানডা লওন লাগদো না। আল্লাহ আল্লাহ কইর্যা অহন টেরেইনডা আইলেই বাঁচি।’
গৌরীপুর পাবলিক কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম মিন্টু বার্তা২৪.কমকে জানান, বিশ্রামাগার বন্ধ থাকায় যাত্রীরা মালপত্র নিয়ে বাইরে আশ্রয় নেয়ায় স্টেশনে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। নারী যাত্রীরা বখাটেদের উৎপাতের শিকার হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ স্টেশন ও যাত্রীদের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করলেও অধিকাংশ বিকল হয়ে গেছে। এতে করে এই স্টেশনে যাত্রীসেবার মান দিন দিন কমে যাচ্ছে। সেবার মান বাড়াতে এই চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধানে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে রোববার (২৭ জানুয়ারি) সকালে গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আব্দুর রশিদ বার্তা২৪.কমকে জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে প্রথম শ্রেণির বিশ্রামাগার রাতে খোলা হয় না। তবে দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্রামাগার সব সময় খোলা থাকে। গতকাল রাতে কেন বন্ধ ছিল সে বিষয়ে খোঁজ নেয়া হবে। আর ত্রুটিযুক্ত সিসি ক্যামেরাগুলো সংস্কার করা হবে।