মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বাইক্কাবিলে দুই দিনব্যাপী পাখিশুমারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বছর বাইক্কাবিলে ৩৯ প্রজাতির পরিযায়ী ও দেশি জলচর পাখির দেখা মিলেছে। তার মধ্যে রয়েছে ১৯ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আর ২০ প্রজাতির দেশি জলচর পাখি।
২০১০ সালের পর ২০১৯ সালে এসে এতো বেশি পরিমাণ পাখি বাইক্কাবিলে দেখা মিলেছে বলে জানিয়েছেন গণনাকারী ড. পল থম্পসন। মঙ্গলবার রাতে বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে এ বিলে ৪০ প্রজাতির ১২ হাজার ২৫০টি পাখির দেখা মিলেছিল।’
পাখি বিশেষজ্ঞ ড. পল থম্পসন এ বছর ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি দুই দিনব্যাপী হাইল হাওরের বাইক্কাবিলে অবস্থান করে পাখি গণনা করেন। এশিয়ান ওয়াটার বার্ড সেনসাসের অধীনে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব বাইক্কাবিলে এই পাখিশুমারি করা হয়। জলাভূমির সূচক অনুযায়ী এসব শুমারিতে শুধু জলচর পাখিকেই গণনার আওতায় নেওয়া হয়।
২০০৪ সালে বাইক্কাবিল প্রতিষ্ঠার পর ঐ বছরের জুলাই মাস থেকে পাখিশুমারির আওতায় নিয়ে আসা হয়। ঐ বছর মোট ২৯৬টি জলচর পাখি বাইক্কাবিলে আসে। ২০১৮ সালে এ বিলে ৩৮ প্রজাতির পাঁচ হাজার ৪১৮টি পাখির দেখা মেলে।
বাইক্কাবিলে পাখির পরিমাণে তারতম্য হওয়ার কারণ সম্পর্কে ড. পল বলেন, ‘বাইক্কাবিল অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার পর সেখানে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজকর্ম করা হয়। যেমন হিজল করচের বাগান, গাছ লাগানো ও খনন কাজ করা হয়। এ কাজগুলো সাধারণত শুষ্ক সময়ে করা হয়, যখন পাখি আসা শুরু হয়। তখনই কাজ শুরুর কারণে পাখি আসা কমে যায়। আবার কাজ শেষের পর পাখি আসা শুরু করে।’
তিনি জানান, পরিযায়ী পাখিরা আসার পূর্বে তাদের আবাসস্থলটি নিরাপদ কিনা সেটি বিবেচনায় রাখে। সাধারণত যখন পাখিরা আসে তখন জলাভূমিতে মাছ ধরা পড়ে। মানুষের আনাগোনা বেড়ে যায়। তাই শিকারের ভয়ে অর্থাৎ পাখিরা যখন বুঝে নেয় তাদের আবাসস্থলটি নিরাপদ নয়, তখনই পরবর্তী বছরে পাখির আনাগোনা কমতে থাকে।
এছাড়া পরিযায়ী পাখি যখন যেখান থেকে আসে সেখানে প্রজনন অবস্থা কেমন ছিল বা যে পথে আসা যাওয়া করে সেই পথের সার্বিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। এমনকি বাইক্কাবিলের বাহ্যিক অবস্থা যে পরিমাণে গভীরতা, জলজ উদ্ভিদের পরিমাণ, প্রাচুর্য্য এসবের উপর নির্ভর করে।
পল থম্পসন বলেন, ‘এ বছর বাইক্কাবিলে খয়রা কাস্তেচরা নামের পরিযায়ী জলচর পাখিটি এতো বেশি এসেছে, যা আর কোনো সময় আসেনি। এখন প্রতি বছর এর সংখ্যা বাড়ছে। এ বছর বাইক্কাবিলে এ জাতীয় ২৮৮টি পাখির দেখা মেলে। সবচেয়ে বেশি এসেছে গেওয়ালা বাটান পাখিটি। এ বছর দুই হাজার ২৮০টির দেখা মিলেছে। এ পাখিটির সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে।’
এছাড়া বাইক্কাবিলে অন্যান্য যেসব পাখির দেখা মিলেছে সেগুলো হলো- পাতি তিলি হাঁস দুই হাজার ২২০টি, উত্তুরে ল্যঞ্জা হাঁস ৯২১টি, রাজ শরালী ৩৯৮টি, পাতি শরালী ৮৬০টি।
এর মধ্যে পৃথিবীজুড়ে বিপন্ন পাঁচ প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে- এর মধ্যে বড়গুটি ঈগল, পালসী কুড়া ঈগল, উদয়ী গয়ার, কালা মাথা কাস্তেচড়া ও মরচেং ভূতিহাঁস।
পল বলেন, ‘যেভাবে হাইল হাওরের বাইক্কাবিলের পার্শ্ববর্তী প্লাবনভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করে বিভিন্ন মৎস্য খামার প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে, এর ফলে উন্মুক্ত জলাভূমির ব্যাপ্তি সংকুচিত হয়ে আসছে। ফলে মাছের বিচরণ ক্ষেত্রের পাশাপাশি হাওর এলাকায় প্রজনন ক্ষেত্রও হারিয়ে যাচ্ছে।’
পাখিগুলো আসে কোথা থেকে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সুদূর সাইবেরিয়া, চীন, মধ্য এশিয়া, ভারতের আসাম থেকে। আর কিছু হলো স্থানীয় দেশীয় প্রজাতীর পাখি বাইক্কাবিলে আসে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে পল থম্পসন বলেন, ‘গত মওসুমে বাইক্কাবিলে অনেক শাপলা, শালুক, পদ্ম ফুল ফোঁটে। সে কারণে পাখির সংখ্যা বেড়েছে। এই বছর বাইক্কাবিলে পানি নির্দিষ্ট পরিমাণে থাকার ফলে পাখিরা অবাধে বিচরণ করতে পারছে। ২০১৭ সালে হাওরে পানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ২০১৮ সালে শুষ্ক মৌসুমে পদ্ম শাপলা শালুক ভালোভাবে বেশি জন্মাতে পারেনি, সে কারণে পাখির পরিমাণ কম ছিল।’