পাখিদের অভয়ারণ্য চুয়াডাঙ্গার বেলগাছী গ্রাম

চুয়াডাঙ্গা, দেশের খবর

অনিক চক্রবর্ত্তী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, চুয়াডাঙ্গা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 02:00:39

পাখিদের কলরবে ঘুম ভাঙে এই গ্রামের প্রতিটি মানুষের। গ্রামের প্রতিটি পরিবারের মতো পাখিরাও যেন গাছের মাথায় বেঁধেছে ঘর। চুয়াডাঙ্গার ছোট্ট এই গ্রামটির নাম বেলগাছী। যুব সমাজ সংগঠনের একদল যুবকের প্রচেষ্টায় গোটা গ্রামটি এখন হয়ে উঠেছে পাখিদের অভয়ারণ্য।

গ্রামটিতে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে বিভিন্ন গাছের ডালে বেঁধে রাখা আছে অসংখ্য মাটির ভাঁড় বা ছোট কলস। আর এসব ভাঁড়ে বা কলসে বাচ্চাদের নিয়ে বাসা বেঁধেছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। গ্রামের রাস্তার দুই পাশে গাছের ডালে বেঁধে রাখা রয়েছে প্রায় দেড় হাজার মাটির কলস আর চারশ বাঁশের ঝুড়ি। আর এগুলোই এখন পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়ের বাসস্থানে পরিণত হয়েছে।

আশপাশের বড় গাছের ডালে বর্তমান সময়ে বিলুপ্ত বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কিচির-মিচির শব্দ শুনতে এখন গ্রামটিতে বেড়াতে আসছে অনেকে। এতে করে ওই গ্রামটি আশপাশের এলাকায় পাখিদের গ্রাম হিসেবেও বেশ পরিচিত। এখানে জেলার বাইরে থেকেও অনেকে বেড়াতে আসে।

চুয়াডাঙ্গার বেলগাছি গ্রামের শিক্ষক ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের সকালে ঘুম ভাঙে পাখিদের কলধ্বনিতে। একটা সময় ছিল যখন উঠতি বয়সের ছেলেরা গুল্টি আর বন্দুকের মাধ্যমে পাখি শিকার করত। এখন সেই ছেলেরাই গ্রামটিকে পাখিদের অভয়ারণ্য করে ফেলেছে। আমাদের গ্রামকে যখন কেউ পাখিদের গ্রাম বলে ডাকে তখন খুব ভালো লাগে।’

গ্রামের গৃহবধূ আকলিমা বলেন, ‘নিজেগো পরিবারের মতোই পাখিগো আমরা ভালোবাসি।’

গ্রামের কৃষক রতন মিয়া জানান, গ্রামটিতে পাখিদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় তার মতো অনেক কৃষকের আজ উপকার হচ্ছে। পাখিরা জমির ক্ষতিকর পোকামাকড় খাচ্ছে। এর ফলে তাদের কীটনাশক কম ব্যবহার করতে হয়।



পাখিদের এমন অভয়ারণ্য তৈরি করা যুব সমাজ সংগঠনের সদস্য সাদ্দাম জানান, পাখিদের জন্য কাজ করার পরিকল্পনাটা আসে তার বন্ধুদের মাঝ থেকেই। পরবর্তীতে তা বাস্তবায়ন করতে গ্রামের সকলকে উৎসাহিত করা হয়। পরিকল্পনা মতো গ্রামের প্রতিটি গাছে পখিদের জন্য মাটির কলসের ঘর তৈরি করা হয়। এরপর একটা সময় গোটা গ্রামটি পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়।

জেলা সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা জানান, কয়েকটি যুবক পাখিদের বাসা তৈরি করে দিয়ে গ্রামটির চিত্র পাল্টে দিয়েছে। তাদের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। একটু প্রচেষ্টা আর ইচ্ছাশক্তি থাকলে জেলার প্রতিটি গ্রাম হতে পারে বেলগাছী গ্রামের মতোই পাখিদের অভয়ারণ্য।

চুয়াডাঙ্গার ডিসি গোপাল চন্দ্র দাস জানান, এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। এর ফলে এলাকায় পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, পাখিরা অবাধে বিচরণ করতে পারছে।

জেলার সাধারণ মানুষ বলছে, পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে খুব অল্পদিনেই চুয়াডাঙ্গাকে গোটা বাংলাদেশের মানুষ চিনবে। তবে শুধু চুয়াডাঙ্গা নয়, সমগ্র বাংলাদেশ হোক পাখিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।

এ সম্পর্কিত আরও খবর