নারী-পুরুষের সমান পরিশ্রমে টিকে আছে ওরাও সম্প্রদায়

গাজীপুর, দেশের খবর

ফয়সাল আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপনডেন্ট, গাজীপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 16:31:25

দক্ষিণ এশিয়ার একটি জাতির নাম- ওরাও। এদের ভাষা কুরুখ, এজন্য অনেক জায়গায় এদের কুরুখ জাতিও বলা হয়। ভারতের ঝাড়খন্ড, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ওড়িশ্যা ও পশ্চিবঙ্গে মূলত এদের বসবাস। তবে, বাংলাদেশেও সেই ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই ওরাওরা বাস করে আসছে।

১৯৯১ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী, বাংলাদেশে ওরাওদের সংখ্যা ছিল প্রায় ছয় হাজার। সবচেয়ে বেশি ওরাও ছিল উত্তরবঙ্গে। তবে, প্রাচীন ভাবধারায় বিশ্বাসী আদিবাসী এই জাতির অন্তত ২০টি পরিবার বাস করে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায়। সব মিলিয়ে এখানে তাদের সংখ্যা শতাধিক হবে। সেই ব্রিটিশ আমলে স্থানীয় টেংরা এলাকায় ওরাওরা রেললাইনের শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে গিয়ে এখানে বসতি গড়ে তোলে।

ধর্মীয় গোড়ামি আর কুসংস্কারে অনেকটাই আচ্ছন্ন এই সম্প্রদায়ের মানুষ। এখনও সংগ্রাম করেই বেঁচে থাকতে হয় তাদের। এমনকি, নারীদের কঠোর পরিশ্রমে সংসারের অভাব কিছুটা ঘুচলেও আলো আসেনি ঘরে।

ওরাও সম্প্রদায়ের যুবক জগদীস জানান, আমরা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থার মত এখন বসবাস করছি। শুধু দু’মুঠো ভাতের জন্যই আমাদের সংগ্রাম। এর জন্য পুরুষের পাশাপাশি প্রতিটি সংসারের নারীদেরও মাঠে কৃষিশ্রম বিক্রি করতে হয়। আর দরিদ্রতার কারণে এখানকার শিশুরা শিক্ষালাভ করতে পারে না। নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতায় দিন দিন দারিদ্র সীমার নিচের দিকে ধাবিত হচ্ছে ওরাওরা।

এছাড়া, সংখ্যালঘু হওয়ায় স্থানীয়দের অত্যাচার ও নির্যাতনেরও শিকার হচ্ছেন তারা। এ কারণে ইতিমধ্যে অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। ফলে, প্রতিনিয়তই ওরাওদের সংখ্যা এখানে কমে যাচ্ছে।   

মাঠে কৃষি কাজ করেন শ্রী মতি সোনিয়া এক্কা। তিনি বলেন, তারা কৃষি কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজ আয়ত্ত করতে পারেননি, তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন। অভাবের কারণে শিক্ষার আলো না থাকায় অন্যত্র কাজের কথা ভাবতেও পারেননি।

এই সম্প্রদায়ের শিউলি লাকরার অভিযোগ, জীবিকার তাগিদে আমরা মাঠে কাজ করি, এতে অনেকের অনেক কথা শুনতে হয়। তবে নারীরাও সমান কাজ করার পরও পুরুষের সমান মজুরি পান না। কৃষি কাজেও রয়েছে আমাদের মজুরি বৈষম্য।

শান্তনা কুজোর ভাষ্য, আমাদের এখন মূল প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে দরিদ্রতা। এর অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার কোনো পথ আমাদের কেউ বলে দিচ্ছে না। অথচ সরকার যদি এখানকার নারীদের কুটির শিল্প প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে একটা পথ দেখিয়ে দিত, তাহলে অনেকেই সাবলম্বী হতে পারতেন। অন্তত এই সম্প্রদায়কে বাঁচাতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

স্থানীয় তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার জানান, এই সম্প্রদায়ের লোকজন খুবই পরিশ্রমী। তারা মূলত কৃষিকাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন, বিশেষ করে নারীরা। কঠোর পরিশ্রম করার পরও তাদের মধ্যে এখনও সভ্যতার ছোঁয়া লাগেনি। তাই আদিবাসী এই সম্প্রদায়ের লোকজনদের দারিদ্র থেকে বের করে আনতে আমাদের সবাইকে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।

গাজীপুর জেলা সমাজসেবা বিভাগের উপ-পরিচালক এস এম আনোয়ারুল করিম বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধান লক্ষ্যই দরিদ্রতার অভিশাপ থেকে সাধারণ জনগণকে মুক্তি দেয়া। এ জন্যই আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। এখানকার আদিবাসী ওরাও সম্প্রদায়ের জন্য একটি পরিকল্পনার মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করার ব্যবস্থা করা হবে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর