দুদকের ভুল, ৩ বছর পর মুক্তি পেলেন নির্দোষ জাহালম

গাজীপুর, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, গাজীপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 16:01:06

প্রায় তিন বছর ধরে কারাগারে থাকা ভুল আসামি টাঙ্গাইলের জাহালম ওরফে জানে আলম মুক্তি পেয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় এতদিন ভুল আসামি হিসেবে কারাভোগ করেছেন তিনি।

রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে হাইকোর্টের আদেশের পর গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তাকে মুক্তির আদেশ দেন।

ওই সময় আদালত বলেন, ‘কোনো নির্দোষ ব্যক্তিকে এক মিনিটও কারাগারে রাখার পক্ষে আমরা নই। ঘটনার সঙ্গে কোনো সিন্ডিকেট জড়িত থাকলে তা খুঁজে বের করতে হবে। বিনা দোষে জাহালমকে কারাগারে রাখা আরেকটি জজ মিয়ার নাটকের মতো ঘটনা।’

এদিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে এতদিন বন্দী ছিলেন জাহালম। তবে হাইকোর্টের নির্দেশে রোববার রাত ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে তাকে এই কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।

জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু দুদকের ভুলে সালেকের বদলে তিন বছর কারাগারে বন্দী ছিলেন টাঙ্গাইলের জাহালম। এ নিয়ে ৩০ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি সেদিন বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। পরে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। জাহালমের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে।

এর আগে, গত ২৮ জানুয়ারি ২৬ মামলায় ভুল আসামি জেলে থাকার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি ও মামলার বাদীসহ চারজনকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট।

এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (৩ জানুয়ারি) সকালে হাইকোর্টে হাজির হন দুদকের মহাপরিচালক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান, মামলার বাদী আবদুল্লাহ আল জাহিদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেন এবং আইন সচিবের প্রতিনিধি সৈয়দ মুশফিকুল ইসলাম। রাতে আদালত ওই আদেশ দেন।

প্রসঙ্গত, জাহালম ২০১৪ সালে নরসিংদীর ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুট মিলে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তখন জাহালমের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঠিকানায় একটি চিঠি পাঠায় দুদক। চিঠিতে ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় জাহালমকে হাজির হতে বলে দুদক। দুদকের ওই চিঠিতে বলা হয়, ভুয়া ভাউচার তৈরি করে সোনালী ব্যাংকের ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে জাহালম।

তবে এই জালিয়াতির সঙ্গে মূলত জড়িত আবু সালেক নামের এক লোক, যার সোনালী ব্যাংক ক্যান্টনমেন্ট শাখায় হিসাব রয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের ১০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ভুয়া ঠিকানাগুলোর একটিতেও জাহালমের গ্রামের বাড়ির কথা নেই। রয়েছে পাশের আরেকটি গ্রামের একটি ভুয়া ঠিকানা। আর এটিই কাল হয়ে দাঁড়ায় জাহালমের জীবনে। এরপর ভুল আসামি হিসেবে প্রায় তিন বছর কারাভোগ করেন তিনি।

এদিকে রাতেই ভাইকে সঙ্গে নিয়ে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে টাঙ্গাইলের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন জাহালমের ভাই শাহনুর।

এ সম্পর্কিত আরও খবর