ঘুম ও ব্যথা নাশক ট্যাবলেট খেয়ে ভয়াবহ নেশার জগতে ঢুকে পড়ছে সাতক্ষীরা কলেজের অনেক ছাত্রছাত্রীরা। নেশার এই জগতে ঢুকে তাদের শারীরিক সক্ষমতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। তারা নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। আর অভিভাবকরা চিকিৎসার জন্য ডাক্তারদের শরণাপন্ন হলেও নেশা থেকে তাদের সরাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রির হার বেড়ে যাওয়ায় ফার্মেসি মালিকদেরকেই দায়ী করছেন অভিবাবকরা।
সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন অভিভাবক তাদের সন্তানদের ব্যবহৃত ট্যাবলেটের খালি পাতা নিয়ে সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিকার চাইতে আসেন।
এ সময় তারা তাদের সন্তানদের শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, এ ট্যাবলেট খেতে বাঁধা দেওয়ায় তারা আত্মঘাতী হয়ে উঠতে পারে বলে আশংকা করছেন।
সাতক্ষীরার পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘিরে বিভিন্ন অনুসন্ধান চালিয়ে নেশার ট্যাবলেট গ্রহণের নানা তথ্য পাওয়া গেছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বর্জ্যস্থানে পড়ে থাকতে দেখা গেছে বিপুল সংখ্যক ট্যাবলেটের খালি পাতা।
সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা এসব তথ্য জানালেও আসক্ত ছাত্রছাত্রীরা তা অস্বীকার করেছেন। এ প্রসঙ্গে তারা বলেছেন নেশার জন্য নয়, লেখাপড়ার কারণে তাদের ঘুম আসে না। তাই ঘুমের জন্য এবং শারীরিক ক্লান্তি দুর করার জন্য তারা এমন সব ট্যাবলেট খেয়ে থাকেন। তবে অভিভাবকদের দাবি তাদের ছেলেমেয়েরা আসক্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু তা জেনেও তার ওপর কঠোর আচরণ করতে পারছেন না তারা।
অনুসন্ধানে বার্তা২৪.কমের প্রতিনিধির হাতে এসেছে ছাত্র ছাত্রীদের ব্যবহৃত ছয় ধরনের ট্যাবলেট। এর মধ্যে রয়েছে মাইলাম ৭.৫, সিন্টা ৫০, পেন্টাডল ৫০, ডার্মিকাম ৭.৫, ডিসোফেন ২, ট্যাপেন্টাডল ৫০। ভুক্তভোগী অভিভাবকরা সংগ্রহে রেখেছেন এসব ট্যাবলেটের খালি পাতা। সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের দফতরে নিয়ে আসা হয় এসব খালি পাতা।
ভুক্তভোগী অভিভাবকরা জানান, তারা এ বিষয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছেন দীর্ঘদিন এসব ট্যাবলেট খেলে তাদের সন্তান মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। তাদের ছেলেমেয়েরা দৈনিক এক সাথে ৭/৮ টিরও বেশি ট্যাবলেট খেয়ে ফেলেন। কয়েকজন বান্ধবী এক সাথে মিলিত হয়ে ট্যাবলেট খায়। বাঁধা দেওয়ায় তারা আত্মহননেরও হুমকি দেয়। বাসা বাড়িতে বসে সবার সামনেই এসব ট্যাবলেট গ্রহণ করে তারা। এতে তাদের হত্যাশা দুর হয়, ভাল ঘুম হয়, বলে দাবি তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরা শহরে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, সিটি কলেজ, দিবা নৈশ কলেজ এবং সরকারি পলিটেকনিক কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩০ হাজারের কম নয়। এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের অনেকেই এই নেশার জগতে ঢুকে গেছেন।
ছাত্রদের মধ্যে এই ট্যাবলেট গ্রহণের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম লক্ষণীয়। বিশেষ করে যারা গ্রাম এলাকা থেকে সাতক্ষীরায় এসে ভাড়া বাড়ি করে কিংবা মেসে অবস্থান করে লেখাপড়া করছেন তাদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি লক্ষণীয়।
তারা অভিভাবকদের কাছ থেকে নিয়মিতভাবে টাকা নিচ্ছেন। সেই টাকায় কিনছেন এসব ট্যাবলেট। রাতে ঘুম হয়না এমন যুক্তি দেখিয়ে বাবা মার চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা এসব ট্যাবলেট ব্যবহার করে নিজেদের শেষ করে দিচ্ছেন। এতে স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় অভিভাবকরা তাদের নিয়ে যাচ্ছেন ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার সব কিছু জেনে বুঝে ওষুধও দিচ্ছেন। একই সাথে এসব ট্যাবলেট ব্যবহার না করার পরামর্শ দিলেও তারা তা মানছেন না। অনেকে ডাক্তারের দেওয়া ওষুধও খাচ্ছেন না।
এদিকে, সাতক্ষীরা শহরের সব ফার্মেসিতে চিকিৎসকের কোনো প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এসব ট্যাবলেট বেচাকেনা হচ্ছে। এতে ট্যাবলেট সহজলভ্য হওয়ায় ছেলেমেয়েরা তা গ্রহণ করছেন। অভিভাবকরা প্রেসক্রিপশন ছাড়া ট্যাবলেট বিক্রির ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা দাবি করেছেন।
জানতে চাইলে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন এসব ট্যাবলেট, ঘুম, ব্যথানাশক এবং শারীরিক উপশমের জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে তা তার জীবনের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।