সোমবার বিকাল সাড়ে তিনটা। পটুয়াখালী সরকারি বালিকা বিদ্যালয় গেট দিয়ে একের পর এক ছাত্রীরা স্কুল ড্রেস পড়ে বিদ্যালয়ে ঢুকছে। কৌতুহলি মনে প্রশ্ন জাগে, এখন তো এসএসসি পরীক্ষা চলছে, স্কুল তো বন্ধ। তবে ছাত্রীরা কেন এ সময়ে স্কুলে আসলো। স্কুল কমপাউন্ডে ঢুকতেই চোখে পড়লো স্কুলের সামনে ও মাঠের মধ্যে বসে আছেন কয়েকজন অভিভাবক।
তাদের সাথে কথা বলে জানা গেলো স্কুলে অতিরিক্ত ক্লাস চলছে। আলাপকালে তারা এও জানালো অতিরিক্ত এই ক্লাসের জন্য প্রতি বিষয়ের শিক্ষকদের ৮শ টাকা থেকে ১২ টাকা করে দিতে হবে।
তবে যারা কোচিং শেষ করে বের হয়েছে সে সব ছাত্রীদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম তোমরা কোন কোন বিষয়ে পড়ছো। স্যারকে কত টাকা দিতে হচ্ছে? অবাক করা বিষয় সবাই একই উত্তর ‘স্যার আমাদের ফ্রি পড়াচ্ছেন’।
তবে খোঁজ খবর নিয়ে জানাগেল, প্রথমদিনেই শিক্ষকরা ছাত্রীদের মুখস্থ করিয়েছেন আমরা তোমাদের ফ্রি পড়াচ্ছি, এটাই বলবে সবাইকে।
সরকারি নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পটুয়াখালীতে চলছে অবৈধ এই কোচিং বাণিজ্য। আর এ ক্ষেত্রে শহরের সরকারি বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরাই নানা অজুহাতে কোচিং পরিচালনা করছেন। যার ফলে পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হওয়াসহ সরকারি নিয়মনীতি অমান্য করা হচ্ছে।
গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ পরীক্ষার বিভিন্ন অনিয়ম বন্ধে সকল ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩১ জানুয়ারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা প্রশাসনকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়। তবে পটুয়াখালী জেলায় এই নির্দেশনার জারির এক সপ্তাহ পরও চলছে অবৈধ কোচিং বাণিজ্য।
শহরের দুটি সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনেকটা ছাত্র ছাত্রীদের জিম্মি করে বিদ্যালয়ের ক্লাস রুমেই কোচিং করাচ্ছেন। এ জন্য প্রতি শিক্ষার্থীকে প্রতি সাবজেক্টের জন্য গুনতে হচ্ছে ৮শ থেকে ১২ টাকা। আর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা টাকা দেয়ার বিষয়টি যেন অস্বীকার করেন সে জন্য কড়া নির্দেশনাও রয়েছে এসব শিক্ষকদের।
পটুয়াখালী সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ও সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও কোচিং বাণিজ্য অব্যাহত রয়েছে। এসব বিষয়ে শিক্ষকরা বিভিন্ন অজুহাত ও যুক্তি তুলে ধরে নিজেদের আড়াল করার চেষ্টা করছেন। আবার অনেক শিক্ষক ক্যামেরা দেখে দৌড়েও পালাচ্ছেন।
পটুয়াখালী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের বাংলা বিষয়ের শিক্ষক রিপন চন্দ্র নাথ জানান, প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়েই তারা পড়াচ্ছেন। তবে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি। আর প্রধান শিক্ষক জানলেন এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে অবৈধ এই কোচিংয়ের বিরুদ্ধে সোমবার বিকেলে অভিযানে নামে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার লতিফা জান্নাতী। সরকারি বালিকা বিদ্যালয় পরিদর্শন করে হাতেনাতে এর প্রমাণও পেয়ে যান। এসময় তিনি শিক্ষকদের কোচিং বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এবং পরবর্তীতে কোচিং চালালে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেন তিনি।
অবৈধ কোচিং বাণিজ্য বন্ধ রাখার পাশাপাশি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও মনিটরিং করার দাবি জানিয়েছেন জেলাবাসী।