লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসায় কমিশন বাণিজ্য

লালমনিরহাট, দেশের খবর

নিয়াজ আহমেদ সিপন,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, লালমনিরহাট, বার্তা২৪ | 2023-08-11 12:27:47

প্রথমে ৫০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করা লালমনিরহাট সদর হাসপাতালটি ধীরে ধীরে একশত শয্যায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করতে নতুন ভবন নির্মাণ করার কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু শয্যা সংখ্যা উন্নতি হলেও চিকিৎসক সংকটে ভুগছে লালমনিরহাট জেলাবাসীর স্বাস্থ্য সেবার একমাত্র ভরসা সদর হাসপাতালটি।

৩৯টি চিকিৎসক পদের ২৩টিই এখন শূন্য। উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে চলছে জেলাবাসীর স্বাস্থ্য সেবা। নামে-বেনামে গড়ে উঠেছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সেই সঙ্গে কমিশন বাণিজ্যে ক্রমাগত বাড়ছে চিকিৎসা ব্যয়।

অর্থলোভী কিছু চিকিৎসক বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির সঙ্গে গোপন চুক্তিতে রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার ওপর কমিশন গ্রহণ করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, কমিশনের লোভে অনেক চিকিৎসক অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষাও করাচ্ছেন। এমনকি নিজের পছন্দের প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনতেও বাধ্য করছেন তারা।

জানা গেছে, জেলাবাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে বর্তমানে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করতে নতুন ভবন নির্মাণ করার কাজ চলমান রয়েছে। আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে ২৫০ শয্যায় যাত্রা শুরু করবে এ হাসপাতালটি। শয্যার সংখ্যা ও নতুন নতুন অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণ হলেও নেই সেই পরিমাণ চিকিৎসক।

যারা রয়েছেন তারাও হাসপাতালের চেয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস ও ক্লিনিকে সেবা দিতে ব্যস্ত থাকেন। নানা অজুহাতে রোগীদের ক্লিনিকে ভেড়াতে চেষ্টা করেন বলে ভুক্তভুগিদের অভিযোগ।

অপারেশন থিয়েটার ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকলেও নানান অজুহাতে করা হয় না অপারেশন। অনেকেই সু-চিকিৎসার জন্য বুড়িমারী দিয়ে ভারতে চলে যাচ্ছেন রোগীরা।

হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা গেছে, ৫টি উপজেলা ও দুইটি পৌরসভার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সদর হাসপাতালে আন্তঃবিভাগ ও বহিঃবিভাগে চিকিৎসা দেয়া হয়। একশত শয্যার এ হাসপাতালে চিকিৎসক পদ রয়েছে ৩৯টি। যার মধ্যে ২৩টি পদই শূন্য। কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১৬জন। যার মধ্যে ছুটি ও প্রশিক্ষণ মিলে বাহিরে রয়েছেন ৪জন। ফলে শূন্যতারভারে রুগ্ন হয়ে পড়েছে হাসপাতালটি। প্যাথলজি বিভাগের যাবতীয় যন্ত্রপাতি থাকলেও নেই প্যাথলজি কনসালটেন্ট। ফলে টেকনোলজিস্ট দিয়ে রোগ নিরূপণ করা হচ্ছে রোগীদের।

আন্তঃবিভাগে একশত শয্যা হলেও প্রতিদিন ১২০/১৪০ জনের মত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। মেডিকেল অফিসারের অভাবে মাত্র ৩জন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) জরুরি বিভাগ থেকে বহিঃবিভাগ পর্যন্ত সামলে নিচ্ছেন। প্রয়োজনে তারা সহযোগিতা নিচ্ছেন জুনিয়র কনসালটেন্টদের।

শরীরের ব্যথার যন্ত্রণায় আদিতমারী থেকে আসা নুরজাহান খাতুন(৬০) জানান, সকালে এসে ৫ টাকার টিকিট ১০টাকায় কিনে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। দেড়ঘণ্টা হলেও চিকিৎসকের দরজায় পৌছতে পারেননি। এর আগে দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসাপত্র ও ঔষধ নিলেও তারা বলে দেয়নি ঔষধ খাওয়ার নিয়ম।

কালীগঞ্জ স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স না গিয়ে সদর হাসপাতালে এসেছেন ৬৭ বছরের কামাল সরকার। তিনি জানেন, এখানে বড় বড় চিকিৎসক থাকেন। কিন্তু এসে দেখেন তেমন কোন চিকিৎসক নেই। চিকিৎসা না নিয়েই তাকে রংপুরে ফিরে যেতে হয়।

তহমিনা বলেন, ‘নামে সরকারি হাসপাতাল। সব ঔষধ কিনে খেতে হয়। রোগীর ভিড়ে ঠিকমত না দেখেই ডাক্তার ঘস ঘস (দ্রুত) করে লিখে দেয়।’

সদর হাসপাতালের নবনিযুক্ত তত্ত্বাবধায়ক গোলাম মোহাম্মদ জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে নতুন চিকিৎসক নিয়োগ সম্পন্ন হলে শূন্যতা পূরণ হবে। যারা কর্মরত রয়েছেন তাদেরকে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অনিয়মিত থাকায় ইতোমধ্যে দুইজনকে অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর