রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ ও দোহারের সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমাবদ্ধতার সুযোগে এই অঞ্চলে অবস্থিত অধিকাংশ বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চিকিৎসা সেবার নামে প্রতিনিয়ত চালাচ্ছেন টেস্ট বাণিজ্য। লাগামহীন টেস্ট বাণিজ্যের কবলে পড়ে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ভুক্তভোগী রোগীদের দাবি, ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমিশনের লোভে বেশকিছু কথিত চিকিৎসক টেস্ট বাণিজ্যে জড়িত রয়েছেন। এছাড়া দেশি-বিদেশি চিকিৎসকের কথা বলে রোগীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ভিজিটের অর্থ আদায় করা হচ্ছে।
নবাবগঞ্জে একটি বেসরকারি মুক্তি ক্লিনিকে কিছু দিন আগে বিভিন্ন নামের ভারতের চিকিৎসক বসিয়ে রোগীর কাছ থেকে ভিজিট ও টেস্টের নামে লুটে নিয়েছেন প্রায় কয়েক লাখ টাকা। বর্তমানে ঐ ক্লিনিকে কোনো ভারতীয় চিকিৎসকদের এখন আর দেখা পাচ্ছেন না বলে রোগীরা জানিয়েছেন।
উপজেলার বাগমারা এলাকায় অবস্থিত একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্যারাগন ট্রমা সেন্টারের টেস্ট বাণিজ্যের লাগাম টানা হচ্ছে না। মান, পরিবেশ ও খরচের দোহাই দিয়ে এই ক্লিনিকের মালিক পক্ষ কিছু চিকিৎসকের সঙ্গে বোঝাঁপড়া করে মনগড়া টেস্টের মূল্য আদায় করছে বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ আছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলার টেস্ট বাণিজ্যের অভিযোগ আছে এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য মুক্তি ক্লিনিক নবাবগঞ্জ ও দোহার শাখা, প্যারাগন ট্রমা সেন্টার, হলি কেয়ার, বান্দুরা দেওয়ান ক্লিনিক, নুর ক্লিনিক, দোহার জেনারেল হাসপাতাল ও জয়পাড়া ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রধান। এসব প্রতিষ্ঠান শুধু টেস্ট বাণিজ্য নয়, ইছমতি নদী ও খাল দূষণের জন্যও তারা দায়ী।
জানা যায়, সরকারি হাসপাতালগুলোতে আলট্রাসনোগ্রাফি ৪৫০ টাকা লাগলেও বেসরকারিতে ১১০০ থেকে ১৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। একইভাবে সরকারি হাসপাতালে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষায় (সিবিসি) ৫০ টাকা নেওয়া হলেও বেসরকারিতে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। ইসিজি ফি সরকারিতে ৮০ টাকা হলেও বেসরকারিতে নেওয়া হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা।
নবাবগঞ্জ ও দোহারের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করা নেই। সরকারি নির্দেশ থাকার পরও কোনো মূল্যতালিকা টানানো নেই এসব স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নবাবগঞ্জের একটি বেসরকারি ক্লিনিকের কর্ণধার বলেন, ‘একটি কমিশন বাণিজ্যের প্রভাবে পরীক্ষা-নীরিক্ষার ব্যয় সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আকাশ-পাতাল ব্যবধান হয়। কমিশন প্রদান করে অতিরিক্ত মুনাফা নিশ্চিত করতেই বিভিন্ন পরীক্ষার চার্জ প্রকৃত খরচের চেয়ে অনেক গুণ বেশি নেয়াও হয়। কমিশনের লোভে কিছু লোভী চিকিৎসকও কারণে-অকারণে গাদা গাদা টেস্ট দেন।’
‘সব চিকিৎসকই যে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দেয়, কথাটা ঠিক না। ডাক্তার নামধারী কিছু অসাধু ব্যবসায়ীই প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত টেস্ট দেয়। কিছু ডাক্তার কমিশন খায়। যে কারণে একটু বাড়তি টেস্ট দেয়, এটা সত্যি কথা।’
বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে টেস্ট বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মো. এহসানুল করিম বলেন, ‘বিষয়টি জানলাম, দ্রুত স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওযা চেষ্টা করা হবে।’