বর্তমানে ইরি-বোরো ধান চাষের ভরা মৌসুম শুরু হওয়ার পাশাপাশি জমি থেকে আলু উত্তোলনের কাজ চলছে। এ কারণে বগুড়া অঞ্চলে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। তবে এ অবস্থাতেও বৈষম্যের শিকার বগুড়ার নারী শ্রমিকরা।
জানা গেছে, একমাস আগেও কৃষি শ্রমিকরা কাজ না পেয়ে শহরে রিকশা চালাতে আসত। কিন্তু এক মাসের ব্যবধানে এখন ৫০০ টাকা মজুরির সঙ্গে দুই বেলা খাবার দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে অনেকেই নারী শ্রমিকদের মাঠের কাজে ব্যবহার করছে।
বগুড়া সদরের তেলীহারা গ্রামের মাঠে আলু উত্তোলন করতে দেখা যায় একই গ্রামের মনোয়ারা, সাহেরা, বেলীর মতো অনেক নারী শ্রমিককে। তারা জানান, পুরুষ শ্রমিকের দাম বেশি হওয়ায় জমির মালিক তাদেরকে কাজে লাগিয়েছেন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জমি থেকে আলু তুলে দিয়ে এই নারী শ্রমিকরা পাবেন প্রত্যেকে মাত্র ১৫০ টাকা।
এদিকে ওই নারী শ্রমিকদের পাশের জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণের জন্য জমি চাষ করছেন লাল মিয়া। তিনি জানান, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জমিতে কাজ করে মজুরি পাবেন ৪৫০ টাকা। এছাড়াও সকালে এবং দুপুরে জমি মালিকের বাড়িতে ভাত খাবেন।
নারী ও পুরুষ শ্রমিকের মধ্যে এই বৈষম্যের বিষয়ে কৃষক খয়বর আলী জানান, পুরুষের তুলনায় নারী শ্রমিকদের কাজের গতি কম। এছাড়াও যে সকল নারী বাড়িতে বসে সময় কাটায় তারাই মূলত মাঠে কাজ করে থাকে।
তিনি জানান, এই অঞ্চলে নারী শ্রমিকরা কৃষি জমিতে কঠোর পরিশ্রমের কাজ করেন না। যার কারণে তাদের মজুরিও কম দেয়া হয়।
বগুড়া সদরের মহিষবাথান গ্রামের মাঠে কাজ করা কয়েকজন নারী শ্রমিক জানান, তারা নিয়মিত মাঠে কাজ করেন না। বাড়ি সংলগ্ন জমিতে কাজ পেলে মাঝে মধ্যে কাজ করে থাকেন।
গোকুল গ্রামের কৃষক ফজর আলী জানান, এখন শ্রমিক সংকট চলছে। পুরুষ শ্রমিকের দাম অনেক বেশি। এদিকে বাজারে আলুর দাম তেমন নেই। এ কারণেই তারা নারী শ্রমিককে কম দামে কাজে লাগিয়ে পুষিয়ে নিতে চান।
জানা গেছে, বগুড়া শহরের নামাজগড়, কলোনি, ফতেহ আলী মোড় এলাকায় প্রতিদিন শ্রমজীবী মানুষে হাট বসে। এসব স্থানে কেউ আসেন নিজের কায়িক শ্রম বিক্রি করতে, আবার কেউ আসেন এসব মানুষের শ্রম কিনতে। একমাস আগেও প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে কাজ না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরে গেছেন। সেই মানুষগুলোকে এখন সকাল ৮টার পর আসলে আর দেখা যায় না। এ অবস্থা চলবে আরও এক মাস।