স্বামীর ছিল টাকার নেশা, স্ত্রী ভুগছিল একাকিত্বে

পাবনা, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, পাবনা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 00:11:22

পাবনার বেড়া উপজেলার ঢালারচর ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের সিএনজি অটোরিকশা চালক জহুরুল ইসলাম (২১) ও মলি খাতুনের (১৮) মধ্যে ছিল গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক। পরে তারা বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের পরে এই ভালোবাসা এক বছরের বেশি জমে ওঠেনি।

স্বামীর অতিরিক্ত টাকার নেশা আর স্ত্রীর পরকীয়ায় সংসারে শুরু হয় অন্তর্দ্বন্দ্ব। এক পর্যায়ে স্বামী জহুরুল ইসলাম বন্ধু আল আমিনের সহায়তায় স্ত্রীকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে।

পরে লাশ ব্রিজের উপর থেকে নদীতে ফেলে ভাসিয়ে দেয়। এমন তথ্যই বেরিয়ে এসেছে পাবনার পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) টিমের তদন্তে।

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল ঘটনাটি ঘটে পাবনার বেড়া উপজেলার ঢালারচর ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামে। এ ঘটনায় মেয়েটির পরিবারের পক্ষ থেকে উপজেলার আমিনপুর থানায় জহুরুল ইসলামসহ ৯ জনকে আসামি করে অপহরণ ও গুমের মামলা করা হয়। ঘটনার পর গা-ঢাকা দেয় জহুরুল। অজানা থেকে যায় খুনের রহস্য।

এ ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর গেল বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে পাবনার পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সখিপুর থেকে জহুরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। জহুরুলের দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এই হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

রোববার (১০ ফেব্রুয়ারি) পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পাবনা জেলা কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম জানান, জহুরুল ও মলির বাড়ি একই গ্রামে। ছেলেটি অটোরিকশা চালাত। এ ঘটনার বছর খানেক আগে দুইজন দুইজনকে ভালোবেসে বিয়ে করে। বিয়ের পর কিছুদিন তারা সুখেই সংসার করছিল। একপর্যায়ে জহুরুলের টাকার নেশা চাপে। সে সকালে সিএনজি নিয়ে বের হয়ে অনেক রাতে বাড়ি ফিরত। এতে একাকিত্ব বোধ করতে থাকে মলি। সময় কাটাতে সে বন্ধু জুটিয়ে নেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয় জহুরুল। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

একপর্যায়ে মলি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এতে জহুরুলের রাগ বেড়ে যায়। সে আল-আমিন নামে এক বন্ধুর সহযোগিতায় মলিকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরে ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল দুই বন্ধু শোবার ঘরে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে হত্যা করে। এরপর নিজের সিএনজি চালিত অটোরিকশাতে করে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর এলাকার একটি ব্রিজ থেকে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। এরপর সে প্রমাণ করার চেষ্টা করে তার স্ত্রী অন্য কারো সঙ্গে পালিয়েছে।

কিন্তু বেশকিছুদিন কোনো খোঁজ না মেলায় গত বছরের ১১ মে মলির বাবা আব্দুর রব বাদী হয়ে জহুরুল ও তার পরিবারের সদস্যরা মিলে ৯ জনের নামে গুমের মামলা করে। এরপরই গা ঢাকা দেয় জহুরুল। সে প্রথমে নোয়াখালী ও পরে সখিপুর গিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালাতে থাকে। মামলার অন্য আসামিরাও জামিনে মুক্তি হয়।

পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম আরও জানান, গত বছরের ৫ মার্চ মামলাটির তদন্তভার পিবিআইকে দেয়া হয়। এরপর থেকেই জহুরুলকে খোঁজা হচ্ছিল। কিন্তু সে এলাকা পরিবর্তনের পাশাপাশি বারবার মুঠোফোনের সিমকার্ড পরিবর্তন করছিল। ফলে তাকে ধরা যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় তার অবস্থান শনাক্ত করে গেলে বৃহস্পতিবার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া তার বন্ধু আল-আমিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর