৫০০ টাকার রুম ৫ হাজার, বিপাকে পর্যটকরা

কক্সবাজার, দেশের খবর

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 22:13:38

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র নগরী কক্সবাজারে বেশিরভাগ সময় পর্যটকদের চাপ থাকে। যার কারণে দিন দিন এ শহরে গড়ে উঠেছে ৪ শতাধিকের বেশি হোটেল-মোটেল। কিন্তু এবার একটু ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে হোটেল-মোটেল মালিকরা। বিশেষ দিনগুলোকে কেন্দ্র করে বাড়ানো হয়েছে রুমের ভাড়া। এতে রীতিমতো হতবাক হয়েছে আগত পর্যটকরা।

জানা যায়, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অগ্রিম বুকিং দিচ্ছে পর্যটকরা। কিন্তু হোটেল মালিকদের যোগসাজশে একটি সিন্ডিকেট মাত্র ৫শ টাকার রুমের ভাড়া ৫ হাজার টাকা দাবি করছে।

এদিকে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেলের ৩০ হাজার রুমে প্রায় ২ লাখ পর্যটক অনায়াসে থাকতে পারে। তবে কোনো বিশেষ দিন আসলেই যেন হাওয়া হয়ে যায় সমস্ত হোটেলের রুম। কোথাও কোনো রুম পাওয়া যায় না। তবে বাড়তি দাম দিলে ঠিকই মেলে হোটেলের রুম।

মূলত একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট বহু বছর ধরে হোটেল মোটেলের রুমের সিন্ডিকেটের রাজত্ব গড়ে তুলেছে। কিছু অসাধু হোটেল মালিক, ম্যানেজার ও ট্যুর অপারেটরস মিলে এ সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। সিন্ডিকেটটি কোনো বিশেষ দিন আসলেই আগে থেকে রুমগুলো ভাড়া নিয়ে নেয়। তারপর পর্যটকদের কাছ থেকে নিয়মের চেয়ে বেশি টাকা দাবি করে। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক পর্যটক রুমগুলো ভাড়া নিয়ে নেয়।

কক্সবাজার শহরের একটি বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক নিজামুল বাহার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমার খুব কাছের এক বন্ধু ২১ ফেব্রুয়ারি ২ দিনের জন্য কক্সবাজার বেড়াতে আসবেন। সে জন্য আমি রুম বুকিং দিতে গিয়ে হোটেল-মোটেল জোনে ঘুরে কোথাও কোনো রুম পেলাম না। আমি হোটেল লেমিচে গিয়ে ২১ তারিখের জন্য রুম চাইলে সেখানকার ম্যানেজার বলেছে রুম নেই। পরে সেখান থেকে বের হয়ে বাইরে দাঁড়ালে একজন এসে বলে স্যার রুম লাগবে। বাড়তি দাম দিলে রুম পাওয়া যাবে। পরে আমি বেশি টাকা দিয়ে রুমের ব্যবস্থা করতে পারি।’

একই ভাবে ব্যাংকার সিরাজুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারি আমার মামা স্বপরিবারে কুমিল্লা থেকে কক্সবাজারে আসবে। তারা ৩ দিন থাকবে। আমি গত ২ দিন ধরে অন্তত ৩০টি হোটেলে খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু কোথাও রুম পায়নি। পরে একজনের পরামর্শে গফুর নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে সাড়ে ৫ হাজার টাকা দিয়ে রুম বুকিং দিলাম। অথচ এসব রুম সর্বোচ্চ ৫শ থেকে ১ হাজার টাকায় ভাড়া দেয়।’

ঢাকা থেকে কক্সবাজারের জন্য রুম বুকিং দিতে যাওয়া সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা থেকে গত ৩ দিন ধরে রুম বুকিং দেয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো রুম পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে মনজুর নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে বেশি টাকায় রুম বুকিং দিলাম।’

এভাবে অসংখ্য মানুষের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হোটেল লেমিচ, কল্লোল, সি ওয়ার্ল্ড, হোটেল মোহাম্মদিয়া, সি ওয়েলকাম, লেগুনা, ব্লু ওসান, ইকরা বিচ, তাহের ভবন, জিয়া গেস্ট হাউজ, জিয়া গেস্ট ইন, সেন্টমার্টিনসহ অসংখ্য হোটেলে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাদের কাছে ২১ ফেব্রুয়ারির জন্য কোনো রুম নেই। কিন্তু সেখানে দালালের মাধ্যমে বাড়তি টাকা দিলে পাওয়া যাচ্ছে রুম।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি হোটেলের ম্যানেজার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মূলত ট্যুর অপারেটর সমিতির নেতা তোফায়েলসহ আরও কয়েকজন মিলে এসব কাজ করছে।’

ট্যুর অপারেটর ব্যবসায়ী এম. রেজাউল করিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমার জানা মতে মাত্র গুটি কয়েকজন এই রুম ব্যবসা করতে পারে। তবে এতে বেশির ভাগ সময় জড়িত থাকে হোটেলের ম্যানেজাররা। তারা বিভিন্ন ট্যুর অপারেটরের নামে রুম বুকিং করে রাখে। তারাই সিন্ডিকেট করে বাড়তি দামে এসব রুম পর্যটকদের কাছে বিক্রি করে। এটা আসলে ঠিক না, এতে পর্যটকরা কক্সবাজার সম্পর্কে বিরূপ ভাবনা পোষণ করে।’

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আসাবুদ্দোলা আশেক বার্তা২৪.কমকে জানান, এসব অনৈতিক কাজ কক্সবাজারের ট্যুর অপারেটররা করে না। এসব কাজ করে ঢাকা ভিত্তিক ট্যুর অপারেটর এবং হোটেল ম্যানেজাররা। এছাড়া বেশির ভাগ হোটেলের নাম এবং ফোন নাম্বার এখন বিভিন্ন অনলাইনে আছে, মানুষ সরাসরি সেখানেই যোগাযোগ করে।

কক্সবাজার হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বার্তা২৪.কমকে জানান, কিছু ফ্ল্যাট বাড়ি করে ব্যবসা করছে হোটেল ব্যবসায়ীরা। তারা ভিন্ন জেলার লোক দিয়ে এখানে আজেবাজে কাজ করছে। একই সঙ্গে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীও থাকতে পারে। আমার জানা মতে প্রশাসনের কাছে সব খবর আছে। তারা চাইলে এ সমস্যার সমাধান করতে পারে।’

কক্সবাজার জোনের ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘হোটেলের রুম নিয়ে এ ধরনের কাজ হয় এটা আমার জানা ছিল না। খুব দ্রুত বিষয়টি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) সাইফুল ইসলাম জয় বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এ রকম একটি সিন্ডিকেটের কথা শুনছি। দ্রুত খোঁজখবর নিয়ে অভিযান চালানো হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর