ইলিশ মানেই বরফ সিন্ডিকেট!

বরগুনা, দেশের খবর

ইমরান হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বরগুনা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 03:15:49

বরগুনায় হঠাৎ করে বরফের দাম বেড়ে তিনগুণ হয়েছে। আর এ কারণে চরম লোকসানের মুখে পড়েছে মৎস্য ব্যবসায়ীরা। জেলেরা বলছে সাগরে ইলিশ ধরা পরলেই বরফ মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দেয় বরফের। আর যার প্রভাব পরছে ইলিশসহ সকল ধরনের মাছে। তবে সরকারি বরফ মিল বন্ধ না থাকলে বরফ কল মালিকরা সিন্ডিকেট করার সুযোগ পেত না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বরগুনার পাথরঘাটার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাট থেকে মাছেরখাল পর্যন্ত প্রায় তিন শতাধিক ট্রলার নোঙর করে আছে। ট্রলারের জেলেরা খাবার জন্য নিত্যপণ্য সামগ্রী কিনে জাল দড়ি গুছিয়ে নিচ্ছে আর কেউ বরফ বোঝাই করছে, দম ফেলার যেন সুযোগ নেই।

এফ বি সোবাহান-৪ ট্রলারের মাঝি খবির মোল্লা (৬৫) বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘যে আগে গিয়ে জাল ফেলতে পারবে, সে আবার মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরতে পারবে। কারণ সমুদ্রে ইলিশের ছড়াছড়ি। জাল ফেললেই যেন মাছে সাদা হয়ে যায় জাল। তাই এখন সবাই তাড়াহুড়ো করে সাগরে যাওয়ার জন্য বরফ কিনতে এসে দেখে এক সপ্তাহ আগে এক ক্যান বরফ ১০০ টাকা কিনেছিল আর এখন সেই একই বরফ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়।

১২ বছর থেকে বাপ-দাদার সঙ্গে মাছ ধরতেন এফ বি নাছরিন-১ ট্রলারের মাঝি জহির জোমাদ্দার (৬৮)। ২০ বছর আগে সে নিজেই একটি ট্রলার তৈরি করে নিজেই ট্রলারের মাঝি। আর গত ৪০ বছর ধরে খুব কম সময়েই বাড়িতে থেকেছেন। কখনো শরীর খারাপ পর্যন্ত হয়নি। তাই বরফের দাম সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞতা আছে তার।

বরফের দাম নিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই চোখ কোপালে তুলে জহির জোমাদ্দার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাপের জন্মে এত টাকা দিয়ে কখনো বরফ কিনি নাই।’

ঘাটের একাধিক জেলেদের সঙ্গে কথা বললে তারা অভিযোগ করে বলেন, সাগরে ইলিশ পরছে শুনলেই বরফ মিল মালিকরা দাম বাড়ায়। এটা কঠিন সিন্ডিকেট। কেউ প্রতিবাদ করলে বরফ বিক্রি করবে না তারা। যখন খুশি ইচ্ছে মতো দামে বরফ বিক্রি করবেন তারা। তারা মাছের পরিমাণের ওপর নির্ধারণ করে বরফের দামের। তবে প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় এখন বেপারোয়া হয়ে গেছে বরফ ব্যবসায়ীরা। তাই বাধ্য হয়ে তারাও বরফের দাম ধরেই মাছ বিক্রি করেন পাইকারদের কাছে। আর তার প্রভাব পরে পাইকারি বাজারে।

এ বিষয়ে বিএফডিসি ঘাটের পাইকারদের সঙ্গে কথা বললে তারা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ইলিশ পর্যাপ্ত পরিমাণে আসছে পাইকারি বাজারে। তবে অনেক সময় ক্রেতার সংকট বা সঠিক মূল্য না পেলে মাছ বিক্রি করতে দেরি হয়। আর তখনই বরফ কিনতে হয় তাদের। আর বরফ মালিকরা একজোট হয়ে দাম বাড়িয়েছে গত এক মাস ধরে। তবে মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের বরফ কলটি চালু থাকলে এতটা সিন্ডিকেট করার সুযোগ পেত না কল মালিকরা।

ক্ষোভ প্রকাশ করে মো. শাফায়েত, আবুল হোসেন ফরাজীসহ একাধিক আরৎদার বলেন, যে হারে বরফের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তাতে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়ে যাচ্ছে। এক কেজির কম ইলিশের মণ ক্রয় করতো তারা ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। আর বর্তমানে তার মূল্য ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ১ কেজি বা তার উপরের ইলিশের মণ প্রতি ক্রয় করতো ৩০ হাজার টাকা বর্তমানে তা এখন ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। বরফের দাম না বাড়লে এমনটা হতো না বলে দাবি তাদের।

মাস্টার বরফ মিলের ম্যানেজার তাইজুল ইসলামসহ অন্যান্য বরফ মিল মালিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা বরফের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বিদ্যুতের লোড শেডিংয়ের কারণে অনেক সময়ে সীমিত পরিমাণে দাম বৃদ্ধি করা হয়। তবে অতিরিক্ত দামে বরফের দাম বাড়ানো হয় না।

কিন্তু কি কারণে বিএফডিসির বরফ কল বন্ধ রয়েছে এ ব্যাপারে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বিএফডিসির কর্মকর্তা লে. এম নুরুল আমিনকে অফিসে পাওয়া যায়নি।

তবে ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা চৌধূরী বার্তা২৪.কমকে জানান, এ সমস্যাটি সমাধানের জন্য বরফ মিল মালিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে সমাধান করবেন তিনি। তবে যদি সমাধান না হয়, তবে তারা খুলনা থেকে বরফ কিনবেন।

পাথরঘাটা ট্রলার মালিক সমিতির দেওয়া তথ্য মতে, পাথরঘাটা বিএফডিসির বরফ কলটি প্রায় ৭ বছর ধরে বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর