গোলপাতা আহরণ মৌসুমে তেমন সাড়া নেই বাওয়ালীদের

বাগেরহাট, দেশের খবর

আবু হোসাইন সুমন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বাগেরহাট | 2023-09-01 10:52:13

সুন্দরবনে চলতি গোলপাতা আহরণ মৌসুমে তেমন সাড়া মিলছে না বাওয়ালীদের। বনবিভাগের কড়াকড়ি আরোপ ও তুলনামূলকভাবে গোলপাতার চেয়ে টিনের দাম কম হওয়াতে দিনকে দিন এর ব্যবহার কমছে। তারপরও জীবিকার তাগিদে পুরানো পেশা টিকিয়ে রাখতে ও নিতান্তই দরিদ্র মানুষের চাহিদা মেটাতে সংশ্লিষ্ট মহাজন-বাওয়ালীরা তাদের ব্যবসা ধরে রেখেছেন।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: মাহমুদুল হাসান ও চাদপাই রেঞ্জ’র সহকারী বন সংরক্ষক মো: শাহিন কবির জানান, পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে শরণখোলা, চাদপাই ও শ্যালা নামক তিনটি গোলপাতা কূপ রয়েছে। এর মধ্যে অভয়ারণ্য ঘোষিত শরণখোলা গোলপাতা কূপে গত তিন বছর ধরে গোলপাতা আহরণ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। শরণখোলার ৯৫ ভাগ এলাকাই অভয়ারণ্য হওয়ায় সেখানে মাছ ও গোলপাতাসহ সকল ধরণের বনজ সম্পদ আহরণে সরকারের পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

এছাড়া অপর দুই কূপ শ্যালা ও চাদপাই থেকে গোলপাতা আহরণের জন্য ২৮ ফেব্রুয়ারি হতে বাওয়ালীদের পাস পারমিট দেয়া হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে শুধু শ্যালা কূপের পাতা আহরণের জন্য পাস দেয়া হচ্ছে। এ কূপের আহরণ শেষ হওয়ার পর চলতি মাসের শেষ দিকে চাদপাই কূপের পাস দেয়া হবে। এ পর্যন্ত শ্যালা কূপে ৪১টি নৌকার পাস দেয়া হয়েছে। যারা প্রতিদিন সেখান থেকে পাস অনুযায়ী নৌকা প্রতি ৫০০ মণ গোলপাতা কেটে বোঝাই করছেন। বনবিভাগের হিসেব মতে গত মৌসুমে এই দুই কূপ থেকে প্রায় ৪০ হাজার মণ গোলপাতা আহরণ হয়েছিল। এবারও বনবিভাগের আহরণ লক্ষ্যমাত্রা ৪০ হাজার মণেই রয়েছে।

মুলত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সুন্দরবনে গোলপাতা আহরণ মৌসুম। কিন্তু নানা কারণে চলতি মৌসুমে বাওয়ালীরা বেশ দেরিতেই শুরু করেছেন গোলপাতা কাটার কাজ। বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মাদ্রাসা রোডের গোলপাতা ব্যবসায়ী ইমন হোসেন, কুমারখালীর শাহজাহান ও মাকড়ঢোনের আবুল মৃধা বলেন, গোলের ব্যবসার জন্য বাওয়ালীদের প্রচুর টাকা দাদন দিতে হয়। দাদন নিয়েও তারা বন থেকে কেটে আনা গোল ঠিকমত আড়তে দেন না, পথে চুরি করে বিক্রি করে নিজের পকেট ভারি করেন। এছাড়া বাওয়ালীরা সুন্দর-সুশৃঙ্খলভাবে পাতা না কেটে দায়সারাভাবে কাটায় সেগুলোর বাজারে তেমন চাহিদাও থাকে না। যা ব্যবসায়ীদের নিরুৎসাহিত হওয়ার অন্যতম কারণ।

এ সকল ব্যবসায়ীরা আরো বলেন, আগে গোলপাতা বহনকারী নৌকার দুই পাশে ঝুল (ভারসম্য) হিসেবে বনের বিভিন্ন ধরণের গাছ কেটে আনা হতো। কিন্তু এখন সেগুলো কাটা নিষিদ্ধ করায় দেশীয় গাছ নিয়ে ঝুল হিসেবে ব্যবহার করায় খরচও বাড়ছে ব্যবসায়ীদের। এসব কারণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় এখন মংলা শহরে হাতে গোনা দুই একজন আড়তদার তাদের ব্যবসা ধরে রেখেছেন মাত্র।

চাদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: শাহিন কবির বলেন, আগে বড় বড় নৌকা নিয়ে এসে বাওয়ালীরা তাদের পাস পারমিট ছাড়া অতিরিক্ত গোলপাতা কেটে নিতেন। এতে তারা অধিক লাভবান হলেও বনবিভাগ প্রকৃত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হতো। যার ফলে গত বছর থেকে বড় নৌকা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ১৪ মিটার দৈর্ঘ্যের নৌকার ব্যবহার ও বনের কোন ধরনের গাছ না কেটে দেশীয় গাঠ/কাঠ দিয়ে নৌকার ঝুল ব্যবহারের কড়াকড়ি নিয়ম করায় বাওয়ালীদের সংখ্যা এবার কিছুটা কম দেখা যাচ্ছে।

এছাড়া বাওয়ালী কমার অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা বড় নৌকা ব্যবহার করে আসছিল। বড় নৌকার ব্যবহার বন্ধ করায় অনেকে ছোট নৌকা সংগ্রহ করতে না পারায় বাওয়ালী নৌকার সংখ্যা গতবারের তুলনায় এবার কম। যারা আগেভাগে এসেছে তারা তাদের বড় নৌকা কেটে ছোট করে নিয়ে এসেছে।

এদিকে চলতি মৌসুমে গোলপাতা আহরণে বাওয়ালী/নৌকা কম হওয়ার কারণ হিসেবে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: মাহমুদুল হাসান বলেন, তুলনামুলকভাবে গোলপাতার চেয়ে টিনের দাম কম। দুই বছর পর গোলপাতা পাল্টাতে হয় আর টিনের ব্যবহার দীর্ঘস্থায়ী হওয়াটাই অন্যতম একটা কারণ। তিনি আরো বলেন, আগে ঘরবাড়ীতে গোলের ব্যবহার হতো, এখন উঠে গেছেই বললেই চলে। শুধুমাত্র উপকূলের দরিদ্র শ্রেণির মানুষই এর ব্যবহার ধরে রেখেছেন। আর ধনীরা ব্যবহার করছেন চিংড়ি ঘেরগুলোর ঘরে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর