হলুদের গ্রাম বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার গরিবপুরের মানুষ এখন আর গরিব নেই। হলুদ চাষ করে অনেক পরিবারেই ফিরে এসেছে আর্থিক সচ্ছলতা। কেউ নিজের জমিতে হলুদ চাষ করছে, আবার যাদের জমি নেই তারা কাঁচা হলুদ কিনে এনে সিদ্ধ করে শুকিয়ে বাজারে বিক্রি করছে।
শুধু গরিবপুর নয়, হলুদের চাষ ছড়িয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী গনেশপুর, উথলী, রথবাড়ি, নারায়ণপুর, শহরতলীসহ আরও অনেক এলাকায়।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার এই গ্রামগুলোতে হলুদ চাষ হচ্ছে ব্যাপক হারে। তবে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, আগের মতো এখন আর হলুদ চাষ হয় না।
জানা গেছে, এক সময় গরিবপুর ও তার আশপাশের গ্রামগুলোতে হলুদ ছাড়া অন্য কোনো ফসল চাষ করা হতো না। আর এ কারণেই গরিবপুর গ্রামকে হলুদের গ্রাম বলা হয়।
তবে কৃষি বিভাগ বলছে, মাঝে কিছুটা কমলেও প্রতি বছরই হলুদ চাষ বাড়ছে।
গরিবপুর ও তার আশপাশের গ্রামগুলো ঘুরে দেখা গেছে, শত শত নারী-পুরুষ কাঁচা হলুদ প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছে। কেউ কাঁচা হলুদ সিদ্ধ করছে, আবার কেউবা তা রোদে শুকানোর কাজে ব্যস্ত। আবার অসংখ্য নারী রোদে শুকাতে দেয়া হলুদ বাছাই করছে।
গরিবপুর গ্রামের হলুদ ব্যবসায়ী শাহ আলম এবং রেজ্জাকুল বার্তা২৪.কমকে জানান, হলুদের ব্যবসা করে তারা এখন আর্থিকভাবে সচ্ছল। তবে বিভিন্ন কোম্পানিতে শুকনা হলুদের চাহিদা বেড়ে গেলেও আগের মতো ব্যবসায় লাভ নেই।
তারা আরও জানান, কোম্পানিগুলোর চাহিদা মেটাতে নিজের এলাকা ছাড়াও জয়পুরহাট, পাঁচবিবি, ডোমার, নীলফামারী গোবিন্দগঞ্জ এলাকা থেকে তাদের কাঁচা হলুদ কিনতে হচ্ছে। এতে হাটের খাজনা এবং পরিবহন ব্যয় বহন করতে হয়। এরপর সিদ্ধ, শুকানো এবং বাছাই করে কোম্পানিতে সরবরাহ করে টাকার জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষায় থাকতে হয়।
স্থানীয় মজনু শেখ জানান, গরিবপুর গ্রামে কমপক্ষে ৩০ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা হলুদের পাইকারি ব্যবসা করে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে পেয়েছেন।
কাঁচা হলুদ সিদ্ধ-শুকানোর কাজে নিয়োজিত নারী শ্রমিক জমিলা ও রাহেলা জানান, পৌষ মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত তাদের মতো দুই শতাধিক নারী হলুদের কাজ করে থাকেন। সংসারে অন্যান্য কাজের ফাঁকে তারা এই চার মাস হলুদ সিদ্ধ ও শুকানোর কাজ করে বাড়তি আয় করেন। ফলে তারাও এখন আর্থিকভাবে সচ্ছল।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়, শিবগঞ্জ উপজেলা ছাড়াও চলতি মৌসুমে জেলায় ৫৮০ হেক্টর জমিতে হলুদ চাষ করা হয়েছে। গত মৌসুমে চাষ হয়েছিল ৬৮০ হেক্টর জমিতে। এর আগের বছর চাষ করা হয়েছিল ৩৮০ হেক্টর জমিতে। ফলনের পরিমাণ হেক্টর প্রতি চার থেকে সাড়ে চার মেট্রিক টন হয়ে থাকে।