হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে প্রতিদিন ২৫০ জন রোগীর খাবার দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে ১০০ জন রোগীকে। প্রতিবেলায় ১৫০ জন রোগীর খাবার গায়েব করে ফেলছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া পরিবেশন করা খাবার প্রয়োজনের তুলনায় কম, দুর্গন্ধযুক্ত ও অস্বাস্থ্যকর। যে কারণে সুস্থ হওয়ার জন্য ভর্তি হওয়া রোগীরা আক্রান্ত হচ্ছেন ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে। চুক্তি অনুযায়ী মাথাপিছু যে পরিমাণ খাবার দেওয়ার কথা, সেই পরিমাণ না দেওয়ায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে রোগীদের মাঝে।
হাসপাতাল সূত্র ও রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালটি চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালটিতে পাঁচটি ওয়ার্ডে রয়েছে ১০০টি শয্যা। তবে প্রতিদিন সেখানে রোগী ভর্তি থাকেন প্রায় ২৫০ জন। ২৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার পর কর্তৃপক্ষের সাথে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের চুক্তি অনুযায়ী ২৫০ জন রোগীর মাঝে প্রতিদিন তিন বারে মাথাপিছু ১২৫ টাকার খাবার পরিবেশন করার কথা।
চুক্তি অনুযায়ী মাথাপিছু নির্দিষ্ট রয়েছে ২৪০ গ্রাম চাল, ১৫০ গ্রাম মাছ অথবা মাংস, ১৫ গ্রাম তেল এবং ১৫ গ্রাম ডাল, পাউরুটি, কলা, ডিমসহ অন্যান্য খাবার। তবে এর অর্ধেকও দেওয়া হচ্ছে না রোগীদেরকে। অথচ রোগীদের এসব খাবার দেওয়ার পরিবর্তে দেওয়া হচ্ছে নিম্ন মানের খাবার। পচাঁ-বাসি খাবার পরিবেশনের অভিযোগও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে চুনারুঘাটের পারকুল চা বাগানের আজম বিবি নামে এক রোগীর স্বজন জানান, পাঁচ দিন ধরে তার জন্ডিস আক্রান্ত মেয়ে অনিতাকে (৫) নিয়ে তিনি হাসপাতাল রয়েছেন। একদিন সকালে একটি ডিম, ছোট সাইজের কলা ও নামেমাত্র এক টুকরো পাউরুটি পেলেও বাকি চার দিন কিছুই পাননি।
এছাড়া দুপুরে ও রাতে দুই দিন ছোট এক টুকুরো মাছ পেলেও বাকি তিন দিন জুটেছে শুধু এক টুকরো ডিম, অল্পকিছু ঝুল আর খানিকটা ডাল অথবা সবজি। প্রতিবেলাই দেওয়া হচ্ছে পুরাতন ও দুর্গন্ধযুক্ত খাবার। যা খাওয়া তো দূরের কথা মুখের সামনেই নেওয়া যায় না বলে অভিযোগ রোগীদের।
হবিগঞ্জ শহরের উমেদনগর এলাকার বাসিন্দা সুজেতা আক্তার নামের এক রোগী জানান, তিনি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালে রয়েছেন। চিকিৎসা নিয়ে জ্বর সেরে উঠলেও পুনরায় আক্রান্ত হয়েছেন ডায়রিয়ায়। এজন্য প্রতিদিন খাওয়া অস্বাস্থ্যকর খাবারকেই দায়ী করেন তিনি।
হাসপাতালে ভর্তি একাধিক রোগী জানান, সিট না পাওয়ায় তাদেরকে খাবার দেওয়া হচ্ছে না। খাবার চাইলে তাদেরকে বলা হচ্ছে যেদিন থেকে সিট মিলবে, সেদিন থেকে খাবারও পাওয়া যাবে, এর আগে নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, রোগীরা সুস্থ হওয়ার জন্য হাসপাতালে আসেন। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশনের ফলে এখানে এসে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকেন রোগীরা।’ খাবারে বিভিন্ন ধরনের পোকা-মাকড় ভেসে থাকতে দেখা যায় বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রতীন্দ্র চন্দ্র দেব বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কোহিনুর এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা সঠিকভাবেই খাবার পরিবেশন করে থাকি।’ তবে অভিযোগের বিষয়ে তার সাথে কথা না বলে বাবুর্চিসহ কর্মচারীদের সাথে আলাপ করতে বলেন তিনি।