অবশেষে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পেলেন ঝিনাইদহের দুই বীরাঙ্গনা

ঝিনাইদহ, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, ঝিনাইদহ, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 19:44:51

মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রমসহ সব হারিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছিলেন ঝিনাইদহের জয়গুন নেছা ও ফাতেমা বেগম। কিন্তু এতদিন স্বীকৃতি পাননি তারা। যুদ্ধের এত বছর পরও তাদের যুদ্ধ করতে হয়েছে সমাজের সাথে। ঘুরতে হয়েছে মানুষের দ্বারে দ্বারে। অবহেলিত হয়েছেন সমাজের প্রভাবশালীদের কাছে।

মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পর এসে অবশেষে তাদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধের পর যেন আরেকটি যুদ্ধ জয় করলেন তারা। তারা হলেন- ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চননগর এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধা জয়গুন নেছা ও কালিগঞ্জ উপজেলার মোল্লাকোয়া গ্রামের ফাতেমা বেগম।

মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের হাতে নির্যাতিত হওয়ায় জয়গুন নেছা ও ফাতেমা বেগমসহ ১০ জন বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়ে সম্প্রতি গ্যাজেট প্রকাশিত হয়েছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৬০তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা এই স্বীকৃতি পেয়েছেন। এ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া বীরাঙ্গনার সংখ্যা হলো ২৭১ জন।

সদ্য স্বীকৃত বীরাঙ্গনা জয়গুন নেছা জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বামী হাবিবুর রহমান ও সতীনের মেয়ে হাসিনা খাতুনকে হারিয়েছেন। পাক সেনারা তাদের ধরে নিয়ে আর ফেরত দেয়নি। নিজের আর পরিবারের সদস্যদের উপর পাক বাহিনীর পাশবিক নির্যাতন ও বর্বরতার সেই দিনগুলোর কথা মনে হলে এখনও গা শিউরে ওঠে।

তিনি বলেন, নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণ করতে এই বয়সে সার্টিফিকেট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে বিভিন্ন সময় ছুটেছেন এ অফিস থেকে সে অফিসে। অবশেষে এ বছর সরকার তার স্বীকৃতি দিয়েছে। এতদিন পর হলেও বীরাঙ্গনার সম্মান পেয়েছি। আমি এখন মারা গেলেও শান্তি পাব।

বীরাঙ্গনা ফাতেমা বেগম জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার বানুড়িয়া গ্রামের স্বামী সিরাজুল ইসলামের বাড়ি থেকে পিতার বাড়ি যশোরের চৌগাছা উপজেলার চন্ডিপাড়া গ্রামে যাচ্ছিলেন তিনি। পথে কালীগঞ্জ উপজেলার মাহমুদপুর এলাকা থেকে পাক-হানাদার বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে কয়েকদিন আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন চালায়। সেখান থেকে ফিরলে স্বামী সিরাজুল তাকে আর গ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে কালীগঞ্জ উপজেলার মোল্লাকোয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শুকুর আলী তাকে বিয়ে করেন। দীর্ঘদিন ধরে তাঁর স্বীকৃতির দাবি নিয়ে বিভিন্ন মহলের ঘুরেছেন। সমাজের কর্তাদের কাছে গেলে তারা অবহেলা করেছেন। অবশেষে স্বীকৃতি পাওয়ায় আবেগাপ্লুত হয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করেন।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর