‘আমাদের বিদ্যালয়ে স্থায়ী শহীদ মিনার নেই। আমরা কাঠ আর কাপড় দিয়ে প্রতি বছর অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে মহান ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি। আমরা এলাকার কমপক্ষে সাতটি গ্রাম ঘুরে প্রভাত ফেরির গান গাই। শহীদ মিনার তৈরি করে নিজেরাই ফুল সংগ্রহ করি। মালা গাঁথি, ফুলের তোড়া বানাই। সেই ফুলের মালা ও তোড়া নিয়ে একুশের প্রভাতে বিদ্যালয়ে গিয়ে মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।’
এভাবেই মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস পালনের অনুভূতি ব্যক্ত করছিল সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ডি. বি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া সুলতানা, হালিমা খাতুন, জাকিয়া সুলতানা, চৈতি দেবনাথ, ফারজানা সুলতানা মিথিলা, সুমাইয়া পারভীন, খাদিজা খাতুন, মিতালী ঘোষ, কণিকা মণ্ডল, খাদিজা সুলতানা, তমালিকা সরদার, রাবেয়া সুলতানা, জান্নাতুল ফেরদৌস মিমসহ অনেকেই।
তারা আরও জানায়, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালনে তাদের সহযোগিতা করে।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এমাদুল ইসলাম জানান, ১৯৯৫ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে মহান ভাষা দিবস উপলক্ষে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এ অবস্থা শুধু ডি. বি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে নয়, ভাষা আন্দোলনের ৬৭ বছর পার হলেও সাতক্ষীরা জেলার প্রায় ৫৮ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নেই শহীদ মিনার। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস পালনের জন্য কখনো অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়, আবার কখনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে মহান ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা থেকে।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলায় প্রাথমিক পরবর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে মোট ৫৭৫টি। যার মধ্যে ৩৩৩টি প্রতিষ্ঠানেই নেই শহীদ মিনার। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১২৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৮০টিতেই শহীদ মিনার নেই। একইভাবে দেবহাটার ৩০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৪টিতে, আশাশুনির ৮০ প্রতিষ্ঠানের ৩২টিতে, কালিগঞ্জের ৬৯ প্রতিষ্ঠানের ৩৬টিতে, শ্যামনগরের ৮৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬১টিতে, তালার ৯২ প্রতিষ্ঠানের ৩০টিতে এবং কলারোয়ার ৯২ প্রতিষ্ঠানের ৮০টিতেই নেই শহীদ মিনার।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ২০১টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার আছে মাত্র ১৩টিতে। এসব প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি শহীদ মিনারের অবস্থা ভালো না। এই তালিকায় সাতক্ষীরা সিটি কলেজের শহীদ মিনার সবার আগে। সাতক্ষীরার অন্যতম বৃহৎ এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শহীদ মিনারের কিছু অংশ ভেঙে গেছে। ভাঙন ধরেছে বেদিতেও। এর ওপর জুতা পায়ে অবাধ চলাচল করে স্থানীয় অনেকেই। মাঝে মাঝে এখানে আস্তানা গাড়ে বেদেরা। তারা জুতা পায়ে এ শহীদ মিনারের ওপর অবাধ বিচরণ করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সাঈদ বলেন, ‘কিছুদিন হলো শহীদ মিনারটির কিছু অংশ ভেঙে গেছে। আমরা নতুন একাডেমিক ভবনের সামনেই নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, যার কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে। এ জন্য ওই শহীদ মিনারটি আর সংস্কার করা হয়নি।’
এদিকে শহীদ মিনার সম্পর্কে লাবসা ইমাদুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ আহমেদ রাজ বলে, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে কোনো শহীদ মিনার নেই। তাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আমরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারি না।’
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘জায়গা সংকটের কারণে কিছু কিছু বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা কঠিন হয়ে যায়। তবে আমরাও চাই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণ করা হোক।’