২ চিকিৎসক দিয়ে চলছে ৫০ শয্যার হাসপাতাল

বাগেরহাট, দেশের খবর

আবু হোসাইন সুমন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বাগেরহাট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 19:56:11

৫০ শয্যার সরকারি হাসপাতালে ২৭ জনের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র দুইজন চিকিৎসক। এই দুই জনের মধ্যে কেউই বিশেষজ্ঞ কিংবা সিনিয়র ডাক্তার নন। জুনিয়র এই দুই ডাক্তার দিয়ে চলছে বাগেরহাটের মংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা কার্যক্রম।

সরকারি হাসপাতালের এই ডাক্তাররা আবার বসছেন প্রাইভেট ক্লিনিকেও। হাসপাতালটিতে আবাসিক মেডিকেল অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন ডা: মো: মশিউল আজম ও মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা: মো: রাফিউল হাসান।

এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিববার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে প্রশাসনিক কাজ কর্মে ব্যস্ত থাকতে হয়। দুই চিকিৎসকের মধ্যে প্রায়ই প্রশিক্ষণের জন্য একজনকে বাহিরে থাকতে হয়। তখন একজনকে দিয়েই চলে গোটা হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম।

গত মঙ্গলবার ঢাকায় একদিনের প্রশিক্ষণ নিতে ডা: মশিউল আজম তিনদিনের ছুটিতে ছিলেন। এই পুরো সময় একজন চিকিৎসককেই সামলাতে হয়েছে হাসপাতাল।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ডাক্তার স্বল্পতার কারণে ঠিকমত সেবা পান না তারা। সন্ধ্যার পর তো শুধু নার্স ছাড়া কেউ থাকেন না হাসপাতালে। সেই সময় ডাক্তারকে খুঁজে আনতে হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের এক্সরে মেশিন অকেজো পড়ে রয়েছে। এক্সরে মেশিন নষ্ট থাকায় এর মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিও) বসে বসেই দিন কাটাচ্ছেন। নেই ইসিজি ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি যন্ত্র। নষ্ট পড়ে রয়েছে জেনারেটরটিও।

এখানে প্রাথমিক সেবা দেয়া হয় জ্বর, ম্যাথাব্যথা, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, কলেরা রোগীদের। এসকল রোগীদের কেউ আবার বেশি অসুস্থ বোধ করলে রেফার করা হয় খুলনা মেডিকেলে। এছাড়া শ্বাসকষ্ট, স্ট্রোক, হার্টঅ্যাটাক ও সিজারজনিত রোগীদের সেবা মিলে না এ হাসপাতালে।

হাসপাতালের ল্যাবে ইউরিন, ব্লাডের রুটিন চেক, কিডনি পরীক্ষা ও টাইফয়েড, মালেরিয়ার পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়ে থাকে। এক্সেরে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফিসহ অন্যান্য পরীক্ষা জন্য যেতে হয় হাসপাতালের ডাক্তারদের পছন্দসই বেসরকারি ক্লিনিকে। তাদের পছন্দ মতো ল্যাবে টেস্ট না করালে সেই রিপোর্ট দেখেন না এবং রোগীদের সাথে এ নিয়ে খারাপ ব্যবহার করে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

হাসপাতালে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকার সুযোগে কর্তৃব্যরত চিকিৎসকদের পরামর্শে রমরমা বাণিজ্য চালাচ্ছেন শহরের মাদরাসা রোডের বাগেরহাট জেটি, উপজেলা ও হাসপাতালের সামনের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো। তারাও নামেমাত্র পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

এ বিষয়ে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিববার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: জীবিতেষ বিশ্বাস বলেন, ‘হাসপাতালটিতে ২৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র দুইজন। এদের মধ্যে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। দুইজনই আবার জুনিয়র, ৩৫তম বিসিএস-এর। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও রোগীদের পুরোপুরি সেবা প্রদান সম্ভব হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘এখানে কেউ আসলে থাকতেও চান না। তদবির করে অন্যত্র চলে যান। কারণ হলো এখানে সার্জারির ব্যবস্থা না থাকায় ঐ সব বিষয়ের পারদর্শীরা তাদের কর্মে আগ্রহ হারান। এছাড়া হাসপাতালের আবাসিক ভবনগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ, বসবাস অনুপযোগী। রয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকটসহ নানা অসুবিধাও।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর