প্রায় সোয়া কোটি টাকার ভবন নির্মাণ কাজ নিজের নামে ঠিকাদারি নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন যুবলীগ নেতা। চড়া দামে ওই কাজ আরেক ঠিকাদার কিনে নিয়ে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করছেন। আর এ কারণেই কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। ফলে চাপে পড়ে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন ঠিকাদার। আর একারণেই সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী কাজ স্থগিত করে দিয়েছেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে বগুড়ার দুপচাাঁচিয়া উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ কাজ নিয়ে চলছে এসব ঘটনা। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) এর অধীনে দুপচাচিয়া উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নতুন ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় গত বছর। বগুড়ার শেরপুর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজার রহমান ভুট্টুর মালিকানাধীন মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্স সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজটি পান।
ঠিকাদারি কাজ বিক্রি করার নিয়ম না থাকলেও তিনি শর্ত ভঙ্গ করে এবং স্থানীয় প্রকৌশলীদেরকে ম্যানেজ করে শতকরা ১০ ভাগ লাভে কাজটি বিক্রি করে দেন দুঁপচাচিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শিমু কনসট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী আবুল কালামের কাছে। তিনি চড়া দামে কাজটি কিনে নেয়ার পর অনিয়মের মধ্য দিয়েই কাজ শুরু করেন।
সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, গোবিন্দপুর বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের পার্শ্বে একটি পুকুর ভরাট করে সেখানে চলছে নতুন ভবন নির্মাণ কাজ। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন নিম্নমানের খোয়া দিয়ে ভবনের কলাম তৈরির কাজ শুরু করে ঠিকাদার আবুল কালাম। বিষয়টি তারা ইউপি চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি কাজ বন্ধ করে দেন। এরপর ঠিকাদার আবারও কাজ শুরু করেন নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে।
দুপঁচাচিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক গোবিন্দপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা প্রভাষক নজরুল ইসলাম বার্তা ২৪.কম-কে বলেন, 'আমিও শুনেছি নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বিষয়টি আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করেছি। কাজ তদারকি করবে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী, কিন্তু সেখানে কোন প্রকৌশলীকে একদিনও আমার চোখে পড়েনি।'
একই অভিযোগ করেন গোবিন্দপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোকছেদ আলী বাবু। তিনি বলেন, 'নিম্নমানের খোয়া দিয়ে কলাম ঢালাই করা হচ্ছিল। এ কারণে চেয়ারম্যান কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।'
গোবিন্দপুর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম হেলাল বার্তা২৪.কম-কে বলেন, '২৬ শতাংশ জায়গার ওপর দ্বিতল ইউপি ভবন নির্মাণ কাজে ঠিকাদার শুরুতেই অনিয়ম করেছে। নিম্নমানের খোয়া ব্যবহারের কারণে কাজ বন্ধ করে দিয়ে বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে।'
তবে ঠিকাদার আবুল কালাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'খোয়ার মান পরীক্ষা না করে বলা যাবে না নিম্নমানের। কাজ যথাযথ ভাবে হচ্ছে। এক কোটি ১৬ লাখ টাকার কাজটি তিনি মোল্লা ট্রেডার্স থেকে কিনে নিয়ে বাস্তবায়ন করছেন।'
দুপঁচাচিয়া উপজেলা প্রকৌশল অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজের কথা স্বীকার করে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগের কারণে রবিবার কলাম ঢালাই কাজ বন্ধ রাখা হয়। নানা জটিলতার কারণে নির্মাণ কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এপর্যন্ত মাত্র ২৫ শতাংশ কাজ হয়েছে।'