বগুড়ার তিন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা যমুনা নদীর চরগুলো। সেখানে রোগী বহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্স তো দূরের কথা, সাধারণ যানবাহন চলাচল করতে পারে খুব কম। এ অবস্থায় অসুস্থদের হাসপাতালে নিতে ‘সাইং’ পদ্ধতিই একমাত্র ভরসা এই চরবাসীদের।
বাঁশের সাথে কাঠের পাটাতন বেঁধে ঝোলানো হয়। সেই পাটাতনে শোয়ানো হয় রোগীকে। তারপর বাঁশের দুই প্রান্ত দুইজন কাঁধে নিয়ে রোগীকে ঝুলিয়ে বহন করা হয়। স্থানীয় ভাষায় এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘সাইং’।
বর্ষাকালে নৌ চলাচল থাকায় কিছুটা সুবিধা হলেও শুষ্ক মৌসুমে রোগী নিয়ে যেতে কষ্টের শেষ নেই তাদের। নদী শুকিয়ে ছোট হয়ে যাওয়ায় মাইলের পর মাইল ধু ধু বালু চর পড়ে। সেই পথ হেঁটে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না তাদের। এ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যান অনেক রোগী।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর চরগুলোর সাতটি ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। জরুরি চিকিৎসা সেবায় এ রকম দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। বিশেষ করে শিমুলতাইড়, কাকালিহাতা, হাটবাড়ী, নয়াপাড়া, চকহরিনাথ, টেকামাগুড়া, চরদলিকা, বেনীপুর, কাজলা, ময়ুরেরচর, নান্দীনারচর, ধরাবর্ষারচর, মাজিরাচরসহ প্রায় ৮০টি চরের মানুষের এই দুর্ভোগ। সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকেন প্রসূতিরা।
স্থানীয়রা জানান, রাতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে উপজেলা সদরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দিনে অসুস্থ হলেও কমপক্ষে ৩/৪ কিলোমিটার চর হেঁটে খেয়াঘাটে যেতে হয়। আর রোগী বহন করার একমাত্র বাহন ‘সাইং’ পদ্ধতি। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের বাটিরচর গ্রামের বৃদ্ধ বাবুশাহের (৯০) পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে। যমুনার ভাঙনে বাড়ি-ঘর আর আবাদি জমি হারিয়েছেন অনেক আগেই। বর্তমানে চরের জমি চাষাবাদ করে সংসার চলে তার। বার্ধক্যজনিত রোগব্যাধি ছাড়াও পেঁটের প্রচণ্ড ব্যথায় ছটফট করেন মাঝেমধ্যেই। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে অসহ্য পেটব্যথা শুরু হয় বাবু শাহের। কিন্তু রাতের আঁধারে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোনো উপায় ছিল না। অগত্যা সকাল পর্যন্ত এই বৃদ্ধকে অসহ্য ব্যথায় চিৎকার-চেঁচামেচি করেই অপেক্ষা করতে হয়েছে।
বার্তা ২৪.কমকে বাবুশাহ বলেন, বাড়ি থেকে সারিয়াকান্দি হাসপাতালে যেতে প্রায় চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। এর মধ্যে প্রায় তিন কিলোমিটারই বালুচরের পথ। এরপর খেয়া ঘাটে নদী পাড়ের জন্য আরো ঘণ্টা খানেক। তারপর নদীঘাট থেকে হাসপাতাল পৌঁছাতে আরো আধাঘণ্টা! সব মিলিয়ে চার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে হাসপাতাল যেতে আড়াই ঘণ্টা লাগে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস এম মাহমুদুর রশিদ বার্তা২৪.কমকে জানান, চরের মানুষদের বড় সমস্যা অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে আসা। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া দ্রুত সময়ে হাসপাতালে নিয়ে আসার বিকল্প কোনো পথ নেই। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। তিনিও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন। জেলা প্রশাসক চরের ইউপি চেয়ারম্যানদের তত্ত্বাবধানে নৌ-অ্যাম্বুলেন্স চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।