হারিয়ে যাচ্ছে গারোদের মাতৃভাষা

টাঙ্গাইল, দেশের খবর

অভিজিৎ ঘোষ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, টাঙ্গাইল, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 02:36:08

গারো (আদিবাসী) অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে খ্যাত টাঙ্গাইলের মধুপুর। তবে এখানে এ সম্প্রদায়ের সন্তানরা তাদের মাতৃভাষা হারিয়ে ফেলছে। মান্দি নামের ওই মাতৃভাষা এখন অতীত গারোদের কাছে।

গারোদের এই মাতৃভাষা রক্ষার্থে সরকারি-বেসরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই। তাই দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এই ভাষা। এ ভাষা রক্ষায় সরকারি-বেসরকারিভাবে সহযোগিতা চান তারা।

মধুপুরের বনাঞ্চলের আদিবাসী পল্লীতে গিয়ে দেখা গেছে, শিশুদের গারো মান্দি ভাষায় গান গেয়ে শোনাচ্ছেন তাদের অভিভাবকরা। শব্দগুলি এক এক বুনন করে তার মধ্যে সুর সৃষ্টি করে গাইছেন গারোদের মান্দি ভাষার গান। গান অথবা নিত্য সময়ের শব্দমালা যাই বলি না কেন তার কোনো বর্ণমালা নেই। বর্ণমালা না থাকায় দীর্ঘকালের ধারাবাহিকতায় মুখে মুখে টিকে রয়েছে এই মান্দি ভাষা। তবে নানা সংকটের মধ্যে পড়ে এখন বিলুপ্তির পথে এই ভাষা।

স্কুলপড়ুয়া শিশুদের অধিকাংশই তাদের মাতৃভাষা ভালোভাবে জানে না। কেউ কেউ নিজ বাড়িতে মা-বাবার মুখে শুনে এই ভাষা সম্পর্কে কিছুটা বুঝতে শিখলেও মিশ্র সংস্কৃতির প্রভাবে তার কোনো প্রয়োগ নেই বললেই চলে।

এদিকে বনাঞ্চলের জলছত্র কপোর্স খ্রীষ্টি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে গারোদের মাতৃভাষার ওপর পাঠ্য বই থাকলেও নেই শিক্ষক। যে কারণে মাতৃভাষা শিখতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।

মধুপুরের জলছত্র কপোর্স খ্রীষ্টি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সঙ্গিতা ও সানি জানায়, বিদ্যালয়ে বাংলা ভাষার বই পড়তে হয়। আলাদা কোনো পাঠ্য বই বা শিক্ষক না থাকায় তারা আদি ভাষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের লোকজন জানান, গারো অধ্যুষিত নিজ এলাকাতেই আদিবাসীরা এখন সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। স্কুল-কলেজে লেখাপড়া, ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত সব ক্ষেত্রেই বাংলা ভাষার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ কারণে তাদের মাতৃভাষার চর্চা কমে গেছে। তাই গারোদের ভাষা রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা।

জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘গারো সম্প্রদায়ের এই ভাষা রক্ষায় শিক্ষা, গবেষণা, পৃষ্ঠপোষকতা ও সরকারি উদ্যোগের বিকল্প নেই। দিন দিন আমাদের মাতৃভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইলের মধুপুরে প্রায় ৩৫ হাজারের অধিক বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আদিবাসীরা বসবাস করছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর