৬৬ বছরেও হয়নি ভাষা সৈনিকদের তালিকা

মেহেরপুর, দেশের খবর

মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, মেহেরপুর | 2023-08-27 20:31:23

বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের মাতৃভাষা। ভাষার দাবিতে অনেকেই জেল খাটতে হয়েছে। রক্তের দাম দিয়ে বাংলা ভাষা আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃত। অথচ উচ্চআদালতের নির্দেশনা থাকা সত্বেও দেশে সরকারিভাবে এখনও প্রনয়ণ করা হয়নি ভাষা সৈনিকদের কোনো তালিকা। গবেষকরা বলছেন, বাঙালির সংস্কৃতি, বীরত্বগাঁথা ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ভাষা সৈনিকদের তালিকার কোনো বিকল্প নেই। মেহেরপুর জেলার ২০ ভাষা সৈনিক সম্পর্কেও জানে না নতুন প্রজন্ম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেহেরপুর শহরের পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়ার ৮৯ বছর বয়সী গোলাম কাউছার চানাসহ ৫ জন ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার দাবিতে ঢাকার রাজপথের সেই উত্তাল মিছিলে অংশ নেন। পাকিস্তানী হানাদরা বাহীনির গুলিতে চোখের সামনেই দেখেছেন অনেককে মাটির সাথে লুটিয়ে পড়তে। তাদের আত্মত্যাগে আজ মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারছে বাঙ্গালি জাতি। এরপর কেটে গেছে ৬৬ বছর। অথচ কোনো স্বীকৃতি তো দূরের কথা তাদের কথা জানেন না কউ।

মেহেরপুর শহরের মণ্ডলপাড়ার আরেক ভাষা সৈনিক ইসমাঈল হোসেন। ভাষার জন্য মিছিল করায় তিনিসহ ৭ জনকে জেলে যেতে হয়েছিল। বহিস্কার হয়েছিলেন বিদ্যালয় থেকে। পাক শাসকরা ওই ছাত্রদের বিদ্যালয় থেকে ফোর্স টিসি দিতে বাধ্য করেছিলেন। প্রতিবছরই ২১ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসনতাকে সংবর্ধনা দেয়। অথচ উচ্চাদলতের নির্দেশনা থাকা সত্বেও সরকারিভাবে ভাষা সৈনিকদের কোনোতালিকা করা হয়নি।

ভাষা সৈনিক বয়োবৃদ্ধ গোলাম কাউছার চানা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘জীবনে হয়তো সরকারি স্বীকৃতি দেখে যেতে পারবো না। তাতেও খুব বেশি আক্ষেপ নেই। তবে দেশের সব জায়গায় বাংলা প্রচলন না থাকায় আমাদের কষ্ট দেয়।’

তরুণ প্রজন্মের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভাষা সৈনিকদের তালিকা না থাকায়বিভ্রান্তিতে পড়তে হয় তাদের। ভাষা সৈনিকদের নামের তালিকা প্রণয়ন ও তাদের বীরত্বগাঁথা সংগ্রামের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে উন্মোচনের দাবি জানান তারা।

মেহেরপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল আমিন ধুমকেতু বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন হচ্ছে আমাদের ভাষার ভিত্তি। বাঙালির বীরত্বগাঁথা ইতিহাস ও সংস্কৃতি নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে না পারলে তাদের পথভ্রষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে। তাই তালিকা প্রণয়ন ও ভাষা সৈনিকদের মূল্যয়ন খুবই জরুরি।’

জানা গেছে, সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ না থাকলেও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার প্রধান করা হয়েছে মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ লেখক ও গবেষক ড. গাজী রহমানকে। প্রতিবেদনে ভাষা সৈনিক হিসেবে ২০ জনের নাম উঠে এসছে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে ড. গাজী রহমান বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে একটি বই লিখেছি, যা বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশ করা হবে। সেখানে মেহেরপুরে ভাষা সংগ্রামে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের নাম পরিচয় দেওয়া আছে। তবে তাদের মধ্যে মারা গেছেন অনেকেই। এছাড়াও যারা জীবিত রয়েছেন এবং ইতিহাস ঐতিহ্য ঘাটাঘাটি ও এলাকায় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে ২০ জনের ওই নামের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করেছি।’

এ প্রসঙ্গে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক আতাউল গণি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘লেখক ও গবেষকদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিসব উদযাপন অনুষ্ঠানের ব্যানারে তাদের সবার নাম থাকবে। যাতে তরুণ প্রজন্ম তাদের অবদান সম্পর্কে জানতে পারে। তবে মন্ত্রণালয় থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো তালিকা আমাদের কাছে চাওয়া হয়নি। তালিকা চাইলে এই ২০ জনের নাম দেওয়া হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর