বগুড়ার লাল মরিচের বাম্পার ফলন

বগুড়া, দেশের খবর

গনেশ দাস, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 16:24:33

বগুড়ায় এবার লাল মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। বগুড়ার লাল মরিচের গুণগত মান এবং ঝাল বেশি হওয়ায় এর চাহিদাও রয়েছে দেশজুড়ে। বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন নামকরা কোম্পানির বাজারে বিক্রি হওয়া প্যাকেটজাত গুড়া মরিচ তৈরি হয় বগুড়ার যমুনার চরাঞ্চলে চাষ করা মরিচ থেকে। প্রতি বছর লাল মরিচের মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মসলা প্রস্তুতকারী কোম্পানি গুলো প্রতিনিধির মাধ্যমে চরাঞ্চল থেকে মরিচ সংগ্রহ করে থাকে। চরাঞ্চল থেকে কেনা মরিচ সেখানেই শুকিয়ে ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হয় ফ্যাক্টরিতে।

বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলাতেই কমবেশি মরিচ চাষ হলেও পূর্ব বগুড়ার গাবতলী, ধুনট, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলার বাঙালি এবং যমুনা নদীর চরের জমিতে ব্যাপক হারে মরিচের চাষ করা হয় প্রতি বছর। চলতি মৌসুমে বগুড়া জেলায় মরিচ চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৬শ হেক্টের জমিতে।

এরমধ্যে সারিয়াকান্দি উপজেলাতেই মরিচ চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার মরিচের ফলনও হয়েছে ভাল। এখন চলছে জমি থেকে লাল টুকটুকে পাকা মরিচ তোলা এবং রোদে শুকানোর কাজ।

পূর্ব বগুড়ার মরিচ চাষিরা জানান, কম খরচে অধিক ফলন হওয়ায় প্রতি বছরই তারা অন্যান্য ফসলের চাইতে মরিচ চাষ করে থাকে বেশি। তবে শীত মৌসুমে অধিক বৃষ্টি হলে মরিচের গাছ মরে গেলে তাদেরকে লোকসানের মুখে পড়তে হয়। চাষিরা আরও জানান,সোনাতলার পূর্ব সুজাইতপুর, আচারেরপাড়া, চারালকান্দি, সারিয়াকান্দির হাটশেরপুর, চরদিঘাপাড়া, নয়াপাড়া, করমজাপাড়া, টেংরাকুরা, কাজলা, নান্দীনারচর, ইন্দুরমারাচর, ডাকাতমারা, ধারাবর্ষা ও শংকরপুরচরে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে মরিচ চাষ হয়ে থাকে।

কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানানো হয়, পূর্ব বগুড়ার চারটি উপজেলায় চাষ করা জমি থেকে প্রায় ১৫ হাজার ২শ মেট্রিক টন মরিচ (শুকনা আকারে) উৎপাদন হওয়ার আশা করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।'

সারিয়াকান্দির ময়ূরের চরের মরিচ চাষি, মোকলেছুর রহমান, বাটির চরের শাহীন মিয়া বলেন, 'প্রতি বিঘায় মরিচ চাষে তাদের খরচ হয় প্রায় ১৪ হাজার টাকা। শুকনা আকারে এক বিঘা জমিতে ৬ থেকে ৭মন মরিচ পাওয়া যায়। মরিচের বাম্পার ফলন হওয়ার কারণে কৃষক এবার কাঁচা মরিচের দাম ভাল না পেলেও পাকা মরিচ শুকানোর পর প্রতি মন মরিচ ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছে।'

পূর্ব বগুড়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নারী-পুরুষ এমনকি শিশুরাও লাল মরিচ জমিতে উঠানো এবং রোদে শুকানোর কাজে ব্যস্ত। গাবতলী উপজেলার দুর্গাহাটা এলাকার সুমী বেগম এবং মনোয়ারা বেগম সারিয়াকান্দি উপজেলার ফুলবাড়ি এলাকায় মরিচ শুকানোর কাজ করেন।

তারা তিনি জানান, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত মরিচ শুকানো এবং বাছাই করার কাজ করে থাকেন। একাজে তাদেরকে মজুরি দেয়া হয় মাত্র দেড়শ’ টাকা। তারপরেও বাড়িতে বসে থাকার চেয়ে তারা মরিচ শুকানোর কাজ করছে। আগামী দুই মাস মরিচ শুকানোর কাজ থাকবে বলে তারা জানান।

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হালিম বলেন, 'স্বাদে অনন্য হওয়ায় বগুড়ার মরিচের খ্যাতি দেশ জুড়ে। তাই নামি-দামি মসলা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর নজর এ মরিচের দিকে। যার জন্য এই মরিচের চাহিদা অনেক বেশি। আমরা চাষিদেরকে লাভবান করে তুলতে মরিচ চাষের উপর প্রশিক্ষণ ছাড়াও মাঠে গিয়ে ফসলের সমস্যার উপর সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে থাকি।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর