যে নদীর বুক দিয়ে এক সময় চলত সারি সারি নৌকা সেই নদীই এখন মৃতপ্রায়। মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে নদীগুলোর অস্তিত্ব।
সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতিবেশী দেশ ভারতের ইচ্ছামত পানি প্রত্যাহার, আন্তর্জাতিক পানি বণ্টন নীতিমালা না মানা, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব, স্থানীয় প্রভাবশালীদের অবৈধ দখল ও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার এক সময়ের বহমান প্রমত্তা গড়াই, চন্দনা, হড়াই, চত্রা ও পুষস্বলী নদী।
ফারাক্কার হিংস্র ছোবলে আজ এই পাঁচটি নদী নাব্যতা হারিয়ে ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। এখন এই নদীগুলো শুধুই ইতিহাস। ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল ভারত ফারাক্কা ব্যারেজ চালু করার পর থেকে এ অবস্থা শুরু হয়। ফলে এখন নদীর চিহ্ন আছে কিন্তু নদীতে পানি নেই।
জানা গেছে, প্রতি বছর পলি জমতে জমতে নদীতে বিশাল চর জেগেছে। ফলে এ বছর এসব নদীর পরিস্থিতি বেশ ভয়াবহ। কারণ অন্যান্য বছরে গড়াই নদীতে একটা ক্ষীণ স্রোতধারা থাকলেও এবার পানি নেই বললেই চলে। ফলে এসব নদী এখন খালে পরিণত হয়েছে। নদীতে পানি না থাকায় এ অঞ্চলের পরিবেশ হুমকিতে এবং কৃষক ও জেলেদের জীবন-জীবিকায় কিছুটা শ্লথ হয়েছে।
এলাকাবাসী মনে করেন, এ অঞ্চলের মানুষের জীবনে অভিশাপ বয়ে এনেছে মরণবাঁধ ফারাক্কা। আরেও জানা গেছে, নদীগুলোর উৎসমুখ পদ্মা নদীতে হওয়ায় এর শাখা নদী গড়াই, চন্দনা, হড়াই, চত্রা ও পুষস্বলী নদী আজ হারিয়ে যাচ্ছে। নদীগুলোতে ১২ মাস পানি শূন্য থাকায় এ অঞ্চলের কৃষি ও অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বর্ষাকালে এসব নদীতে কিছু দিনের জন্য পানি থাকলেও প্রায় সারা বছর পানি শূন্য থাকে। আর এ সুযোগে প্রভাবশালী দখলদাররা নদীর দুপাশ দখল করে নিচ্ছে।
নারুয়া লিয়াকত আলী স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক বদিউজ্জামান বার্তা২৪.কম'কে বলেন, 'আন্তর্জাতিক নদীগুলোর সুষ্ঠু পানিবণ্টন ব্যবস্থাপনা না থাকা এবং ফারাক্কা বাঁধের নেতিবাচক প্রভাবেই নদীগুলো মরে যাচ্ছে। নদীগুলোকে আবার পুনঃজীবিত করতে হলে দ্রুত খনন কাজ শুরু করতে হবে। সেই সাথে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে।'
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুম রেজা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'জেগে ওঠা নদীর দুপাশে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ এবং বালু উত্তোলন বন্ধে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নদীগুলো যাতে দখল না হতে পারে সে জন্য আমরা সজাগ আছি।'
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'বর্তমান সরকার মৃত নদীগুলোকে পুনঃজীবিত করতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে বালিয়াকান্দির চন্দনা নদীটি পুনঃখনন করা হয়েছে। গড়াই নদীর খনন কাজটি কুষ্টিয়া থেকে শুরু হয়েছে। আশা করছি এদিকে খনন কাজ শুরু করলে নদীগুলো আবার জেগে উঠবে।'