ল্যান্স নায়েক বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী আজ (মঙ্গলবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি)। নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
মঙ্গলবার তাঁর জন্মস্থান নড়াইল সদর উপজেলার নূর মোহম্মদ নগরে কোরানখানি, র্যালি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচিত্র প্রদর্শনী, শহীদের স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ, গার্ড অব অনার প্রদান, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ ট্রাস্ট ও জেলা প্রশাসন।
সকালে স্থানীয় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর চত্বর থেকে র্যালি বের করা হয়। নূর মোহাম্মদ নগরে শহীদের স্মৃতিসৌধে এটি শেষ হয়। সেখানে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ ট্রাস্টসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
দুপুরে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ ট্রাস্টের সদস্য সচিব আজিজুর রহমান ভুইয়ার সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজামান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা সেলিম প্রমুখ।
১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার বর্তমান নূর মোহাম্মদ নগরে (তৎকালীন মহিষখোলা গ্রাম) জন্মগ্রহণ করেন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ। দরিদ্র পিতা মো. আমানত শেখ ও মাতা মোসা. জেন্নাত আরা খানমের আশা ছিল ছেলে বড় হয়ে লেখাপড়া শিখে তিনি দেশের মুখ উজ্জ্বল করবেন। কিন্তু ডানপিটে নূর মোহাম্মদ স্থানীয় বিদ্যালয়ে মাত্র সপ্তম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত অবস্থায়ই শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটান।
১৯৫৯ সালের ১৪ মার্চ নূর মোহাম্মদ তৎকালীন ইষ্ট পাকিস্তান রেজিমেন্টে যোগদান করেন এবং কৃতিত্বের সঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষে একই বছরের ৩ ডিসেম্বর দিনাজপুর সেক্টরে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৭০ সালের ১ জুলাই যশোর সেক্টর হেড কোয়ার্টারে বদলি হন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ ৮নং সেক্টরে সাবেক ইপিআর ও বাঙালি সেনাদের নিয়ে গঠিত একটি কোম্পানিতে যোগ দেন।
’৭১-এর বছরের ৫ সেপ্টেম্বর যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গোয়ালহাটি গ্রামে একটি টহলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন নূর মোহাম্মদ। তাঁর সঙ্গী ছিলেন আরও চার সৈন্য। তারা পার্শ্ববর্তী ছুটিপুর পাক হানাদার বাহিনীর ঘাঁটির ওপর নজর রাখছিলেন। পাক সেনারা বিষয়টি টের পেয়ে টহলদারী মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁদে ফেলার পরিকল্পনা করে। তাদের এই পরিকল্পনা বুঝতে পেরে নূর মোহাম্মদ সঙ্গীদের নিয়ে হানাদার বাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করেন। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ।
এ সময় মারাত্মক আহত হন সঙ্গী নান্নু মিয়া। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে হানাদারদের মর্টার শেলের আঘাতে মারাত্মকভাবে জখম হন নূর মোহাম্মাদকে। মৃত্যু আসন্ন বুঝে তিনি সিপাহী মোস্তফা কামালের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিয়ে আহত নান্নু মিয়াকে নিয়ে সবাইকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলেন। উপায় না পেয়ে তারা কমান্ডারের নির্দেশ পালন করেন। কিন্তু নূর মোহাম্মাদের কাছে রেখে যান একটি এসএলআর। মৃত্যুপথযাত্রী হয়েও তিনি এসএলআর নিয়ে মৃত্যু অবধি পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে যান। শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করতে করতেই শহীদ হন নূর মোহাম্মাদ।
পরবর্তীতে নিকটবর্তী একটি ঝোঁপের মধ্যে এই বীরের মৃতদেহ পাওয়া যায়। শত্রুরা বেয়নেট দিয়ে তাঁর দেহ ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছিল, চোখ দু’টি উপড়ে ফেলেছিল।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।