লক্ষ্মীপুরের ভুলুয়া নদী এক সময় ছিল খরস্রোতা, যা এখন মৃতপ্রায়। অথচ এক কালে নদীটিতে জোয়ার-ভাটাও হতো। অবৈধ বাঁধ নির্মাণ, দখল, দূষণ, ভরাট ও পলি জমে কমে এসেছে নদীটির প্রস্থ। এছাড়া, খনন না হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে নদীটি শুকিয়ে যায়।
১৯১২ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত উন্মত্ত নদী ছিল ভুলুয়া। বর্তমানে ৭১ কিলোমিটারের দৈর্ঘ্যের এ নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। ঐতিহ্যবাহী এ নদী নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর ও রামগতি উপজেলা হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। এক সময় ভুলুয়ার প্রস্থ ছিল প্রায় ৫০০ মিটার, কিন্তু বর্তমান প্রস্থ মাত্র ৮৫ মিটার।
মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) জেলার কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের চরকাদিরা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নদীর বুকে ট্রাক্টরের চাকা আর মানুষের পায়ের ছাপ। অনেকটা পানিশুন্য নদীটি যেন ছোট ছোট পুকুরে পরিণত হয়েছে। কৃষকরা পাম্প দিয়ে জমিতে পানি সেচ দিয়ে শেষ করে ফেলছেন। মলা-ঢেলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরছেন স্থানীয়রা। বর্ষা মৌসুমে মাছ চাষের জন্য কিছু দূর পর পর নদীর মাঝে বাঁধ দেওয়া আছে। শুকনো নদীর বুকে পড়ে থাকতে দেখা গেছে ছোট ছোট নৌকাও।
পানির অভাবে নদীর আশেপাশে কমে গেছে কৃষি উৎপাদন। হুমকির মুখে পড়েছে নদী কেন্দ্রিক জীববৈচিত্র। অবৈধ বাঁধ ও দখলের কবল থেকে রক্ষা করে নদীটি খনন করা হলে এখানকার লক্ষাধিক মানুষের ভাগ্য ফিরবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
তারা জানান, এক সময় ভুলুয়া নদী পার হতে মানুষ ভয় পেত। একা কেউ নদীটি পার হতে সাহস করতো না। আশপাশের লাখো মানুষ কৃষি উৎপাদনসহ নানা প্রয়োজনে ব্যবহার করতো ভুলুয়ার পানি। এর বুকে বড় সাম্পান আর জাহাজ চলাচল করতো। নদীতে বহু জাতের মাছের সমাহার ছিল। ভুলুয়ার মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন অসংখ্য মানুষ।
কিন্তু এখন প্রভাবশালীরা বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন। অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণসহ বিভিন্নভাবে নদীটি দখল করে রেখেছেন। এমনকি স্থানীয় ইটভাটা মালিকরা ব্যবসার সুবিধার্থে চরকাদিরা এলাকায় নদীর ওপর একাধিক কাঁচা সড়ক নির্মাণও করেছেন।
অন্যদিকে, কমলনগরের চরকাদিরা গ্রামে নদীটির ওপরে একটি বেইলী ব্রিজ রয়েছে, কিন্তু ব্রিজটিও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সাংঘাতিক ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয় ভারী যানবাহন। ব্রিজের সিটগুলো মরিচা ধরে ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে পড়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমতিয়াজ হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ আছে, প্রত্যেকটি নদী অবৈধ দখলমুক্ত করতে হবে। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। ভুলুয়া নদীতে অবৈধ দখল কিংবা বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুসা বলেন, ভুলুয়া নদী খননের জন্য প্রকল্পের অনুমোদন চেয়ে দফতরে আবেদন করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি চলছে। বরাদ্দ পেলে খুব শিগগিরই ভুলুয়ার খনন কাজ শুরু হবে।