মার্চ-এপ্রিল দুই মাস মেঘনায় ইলিশের অভয়াশ্রম। জাটকা রক্ষা ও ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যে এ দুই মাস নদীতে সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার।
সেই লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাত থেকে নদীতে মাছ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ৩০ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত। নিষেধাজ্ঞার কারণে লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় ভাসেনি জেলের নৌকা। এতে নদী এখন শূন্য দেখা যাচ্ছে।
শুক্রবার (১ মার্চ) সকাল ৮ টার দিকে সদর উপজেলার মজু চৌধুরীর হাট ও কমলনগর উপজেলার মতিরহাট এলাকায় নদীতে কোন নৌকা দেখা যায়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর কূলে নৌকা ভিড় করে জেলেরা দলবদ্ধ হয়ে ছেঁড়া-ফাটা জাল বুনছেন। কয়েকজন তাদের নৌকা মেরামতে ব্যস্ত। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে এ কাজটুকুও তাদের শেষ হয়ে যাবে। জেলার ব্যস্ততম মাছ ঘাট মজু চৌধুরীর হাট ও মতির হাট জনশূন্য। কয়েকজন ব্যবসায়ী তাদের মাছের বাক্সগুলো পরিষ্কার করছেন। এ দুই মাস জেলেদের মতো মাছ ব্যবসায়ীদেরও চায়ের আড্ডায় ও হাট-বাজারে গল্প কিংবা ঘোরাফেরা করে সময় কাটবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা সদর, রায়পুর, কমলনগর ও রামগতি উপজেলার মেঘনা এলাকায় মাছ ধরার কোন নৌকা দেখা যায়নি। ইলিশ রক্ষায় নদীতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, কোস্ট গার্ড ও মৎস্য অধিদফতর থেকে সর্তক অবস্থান নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার নির্ধারিত সময়ে মাছ শিকার, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ আইন অমান্য করলে জেল, জরিমানা ও উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। আইন মেনে মেঘনায় মাছ শিকার থেকে বিরত রাখতে জেলেদের নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন।
এদিকে, লক্ষ্মীপুরে প্রায় ৬২ হাজার জেলের মধ্যে সরকারি খাদ্য সহায়তা পায় ২৫ হাজার ২৪৭জন জন। যার কারণে অনেকেই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি থাকা শর্তেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে যান। তবে ইলিশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে দুই মাস স্থানীয় জেলেরা নদীতে যাবেন না বলে জানিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে সরকারের কাছে খাদ্য ও পুনর্বাসন সহায়তার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, মার্চ-এপ্রিল এ দুই মাস মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে সরকার। জাটকা সংরক্ষণের লক্ষ্যে এ সময়ে মেঘনায় ইলিশসহ সকল ধরণের মাছ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়। এ সময়ে জেলেদেরকে মাছ ধরা থেকে বিরত রাখতে জেলেদের নিয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক সভা ও সেমিনার করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময়ের জন্য ২৫ হাজার ২৪৭ জন জেলেকে ৪০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছেন মৎস্য অধিদফতর।
মজুচৌধুরীর হাট ও মতির হাট এলাকার কয়েকজন জেলে জানান, গত অক্টোবর মাসে ২২ দিন মেঘনায় নিষেধাজ্ঞার সময় এখানকার জেলেরা নদীতে নামেননি। অন্য কোন কাজে অভিজ্ঞতা না থাকায় অবসরে তাদেরকে অলস সময় কাটাতে হয়েছে। অধিকাংশ জেলে সরকারি খাদ্য সহায়তা পাননি। এতে করে পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে ছিলেন তারা।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম মহিব উল্লাহ বলেন, 'মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত এই দুই মাস নদীতে মাছ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আইন রক্ষার্থে নদীতে কোস্ট গার্ড, মৎস্য বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আইন অমান্যকারীদের জেল, জরিমানা ও উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।'