টাকার আশায় নয়, মানব সেবাই তার মূল লক্ষ্য

ঠাকুরগাঁও, দেশের খবর

নাহিদ রেজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঠাকুরগাঁও, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 08:18:52

কামরুল হাসান। একজন ওষুধ বিক্রেতা। ঠাকুরগাঁও হাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা তিনি। জেলার আধুনিক সদর হাসপাতালের সামনে একটি গলির ভেতরে ‘লুবনা ফার্মেসি’ নামে রয়েছে তার ওষুধের দোকান। শুধু মাত্র টাকার আশায় নয়, মানবসেবা করাই তার মূল লক্ষ্য। এমন চিন্তা নিয়েই এই ব্যবসা শুরু করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১২টায় ওই ওষুধের দোকানে গিয়ে কামরুল হাসানের সঙ্গে কথা হয় বার্তা২৪.কম এর। এ সময় এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।

অনেক রাত হওয়ার পরও দোকান খোলা রাখার ব্যাপারে জানতে চাইলে কামরুল হাসান বলেন, ‘আমি তো শুধু টাকার জন্য ব্যবসা করি না ভাই। আমি চাই কোনো রোগী যাতে ওষুধের জন্য এই গভীর রাতে কষ্ট করে ছোটাছুটি না করে। ওষুধের অভাবে কেউ যাতে মারা না যায়। যখন একটা রোগীর ওষুধের জরুরি দরকার হয়, সে যেন আমার এখানে আসলে পায়। আমি চাই সকলের সেবা করতে। সেবা করার জন্যই এই ওষুধের ব্যবাসা করা, শুধু টাকার জন্য নয়।’



এর পরই আগ্রহ বেড়ে গেল তার এই মানব সেবার ব্যাপারে আরেকটু জানার। তিনি জানান, দীর্ঘদিন আগে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের সামনে এই ওষুধের দোকান শুরু করেন। তার সহধর্মিনীর নামে দোকানটির নামকরণ করেন ‘লুবনা ফার্মেসি’।

কামরুল হাসান আরও জানান, প্রথমদিকে অর্থ উপার্জনের অবস্থা খুব একটা ভাল না থাকলেও হাল ছেড়ে দেননি তিনি। চেষ্টা চালিয়ে গেছেন প্রতিটি সময় নিজের ব্যবসাকে উপরের দিকে নিয়ে যাবার। সেই সঙ্গে ছিল রোগীদের প্রতিটি ওষুধের চাহিদা পূরণ করারও চেষ্টা। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখেন তার ওষুধের দোকানটি। যাতে করে কোনো রোগীর ওষুধ না পেয়ে কষ্ট না হয়। এভাবে মানবসেবা দিয়ে যাচ্ছেন প্রায় দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে। এমনকি অনেক রোগীকে ফ্রিতেও দিয়েছেন ওষুধ।

যখন রাত বাজে ২টা ৪০মিনিট। এ সময় হাসপাতল থেকে হঠাৎ ছুটে আসেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নে হারেস নামের এক ব্যক্তি। হঠাৎ করেই তার মায়ের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এরপর হাসপাতলে নিয়ে আসেন তার মাকে। চিকিৎসক তাকে কিছু ওষুধ ও ইনজেকশন লিখে দেন। কোনো দোকান খোলা না পেয়ে হারেস চলে আসেন লুবনা ফার্মেসিতে। এখান থেকেই প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো কিনে নেন তিনি।

যাবার পথে দোকানদারকে ধন্যবাদ জানিয়ে হারেস বলে উঠলেন, ‘ভাই আল্লাহ আপনার ভাল করুক। আপনি দোকনটি খোলা না রাখলে হয়তো আজ আমি অনেক বড় একটি সমস্যা পড়ে যেতাম।’

কামরুল হাসান বলেন, ‘২৪ ঘণ্টা ওষুধে দোকান খোলা রেখে অসুস্থ মানুষের সেবা করার চেষ্টা করছি আমি। কোনো দিন রাতে বিক্রি হয়, আবার কোনোদিন সারা রাতেও বিক্রি হয় না। অনেক গরীব রোগীর সুস্থতার কারণে বাকিতেও ঔষুধ দিতে হয়। অনেকে পরিশোধ করে আবার অনেকে অর্থের অভাবে সুস্থ হয়ে টাকা না দিয়েও চলে যায়। এতে আমার কোনো খারাপ লাগে না।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর