ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল উদ্যোক্তা হওয়ার। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন প্রবাস ফেরত মোহাম্মদ আজিম। লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের দক্ষিণ চরবংশীতে একটি ফলের বাগান করে সেই স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তবে রোগবালাইয়ের কারণে গত বছর তার অনেকগুলো মাল্টা গাছের চারা মারা গেছে। এতে অনেক টাকা ক্ষতি হয়েছে।
ফল চাষে কোনো প্রকার অভিজ্ঞতা না থাকলেও স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি পিছু হটেননি। পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার এ স্বপ্নে আবারো হানা দিয়েছে গাছের দেহ থেকে বের হয়ে আসা আঠালো রস ও পাতা মোড়ানো রোগ। রয়েছে ইঁদুরের উৎপাতও। যার কারণে গাছগুলো মরে যাচ্ছে।
এদিকে গাছের সমস্যাগুলো উত্তরণের জন্য আজিম বেশ কয়েকবার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে গিয়েও নিরাশ হয়ে ফিরে আসেন। কৃষি কর্মকর্তারা তার বাগানটিতে পরিদর্শনে যাবার কথা দিলেও আর যাননি। আজিম আশা প্রকাশ করে জানান, যদি কৃষি কর্মকর্তারা তার বাগানটি পরিদর্শন করে গাছের রোগবালাই নিধন ও পরিচালনার জন্য পরামর্শ দেন তাহলে স্বপ্ন পূরণে আর কোনো বাধা থাকবে না।
অন্যদিকে, এই ফল চাষের পাশাপাশি ওই বাগানে কুমড়া গাছের চারা লাগিয়েছেন আজিম। ফলনও ভালো দেখা যাচ্ছে। তবে বাগানে ইঁদুরের উৎপাত থাকায় কুমড়া সংগ্রহ করা যাচ্ছে খুবই কম। কারণ রাতে ছোট ছোট কুমড়াগুলো কেটে ফেলে ইঁদুর।
ফলের এই বাগানটি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত। সাড়ে ৮ একর জমিতে অর্ধলক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে ফলের বাগানটি করেছেন মোহাম্মদ আজিম। তিন লক্ষ্মীপুর পৌরসভার পশ্চিম লক্ষ্মীপুর এলাকার মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজের ছেলে।
জানা গেছে, আজিম এইচএসসি শেষ না করেই ২০১৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় চাকরি করতে যান। সেখান থেকে সাড়ে ৩ বছর পর দেশে ফিরে আসেন। ছোট বেলার স্বপ্ন পূরণ করতে ফলের বাগান দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। পরিবারের সহযোগিতায় রায়পুরের দক্ষিণ চরবংশী এলাকায় তোফায়েল আহমেদ ও আলী দরবেশের থেকে ১০ বছরের জন্য সাড়ে ৮ একর জমি লিজ নেন।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তিনি ওই জমিতে ফলের বাগান করেন। কোনো রকম অভিজ্ঞতা ছাড়াই তিনি বাগানে লাগান মাল্টা, বরই, আম ও পেয়ারা গাছের চারা। এসব গাছ বরিশাল, রাজশাহী ও নাটোর থেকে আনা হয়েছে। বরই গাছের মধ্যে রয়েছে নারকেল, আপেল ও বাউকুল। আমের মধ্যে রয়েছে বারি-৪ ও হিমসাগর।
ওই বাগানে ১ হাজার ৫০০ মাল্টা, ১ হাজার আম, ৫০০ বরই ও ৩০০০ পেয়ারা গাছ রয়েছে। তবে পেয়ারা গাছগুলো এখনো ছোট। এর পাশাপাশি ২৫০টি কুমড়া গাছ রয়েছে। এছাড়া বাগানের চারপাশের সীমানায় কলাগাছের প্রাচীর রয়েছে। সেখানেও রয়েছে ব্যাপক সম্ভাবনা।
মোহাম্মদ আজিম বলেন, ‘আমার বাগানে মাল্টা, আম, পেয়ারা, বরইয়ের গাছ রয়েছে। বাগানে পাতা মোড়ানো রোগ ও গাছের দেহ থেকে বের হয়ে আসা আঠাই এখন বড় সমস্যার কারণ। এতে গাছের পাতাগুলো হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে। গাছগুলোও মারা যায়। দুটি গাছে মাল্টা ধরেছে। কিন্তু গাছগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। কৃষি কর্মকর্তাদের জানালেও তারা বাগানে আসেনি। তারা আসলে বাগানের সমস্যাগুলোর সমাধান করা সম্ভব হতো।’
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।