আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বগুড়ায় বিএনপি কার্যত: দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে বিএনপির দুর্গ হিসেবে খ্যাত বগুড়া জেলায় উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংকটে পড়েছে বিএনপি। এতে করে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে দলের একটি অংশের নেতারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। আর তাদেরকে অপ্রকাশ্যে সমর্থন করছেন জেলার কিছু নেতা। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আরেকটি বড় অংশ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের বিরোধিতা করছেন প্রকাশ্যে।
গত শনিবার (২মার্চ) দলের বিশেষ সভায় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী এবং তাদেরকে সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দলের সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম। এসময় তিনি বলেছেন বিএনপির কিছু নেতাদের পরামর্শেই অনেকেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলায় ৭টিতে বিএনপি এবং ৫টিতে জামায়াত নেতারা উপজেলা চেয়ারম্যান। আসন্ন নির্বাচনে জামায়াতের কোন চেয়ারম্যানই অংশ নিচ্ছেন না। বিএনপির ৭জন চেয়ারম্যানের মধ্যে একজন দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। অপর ৬ জন চেয়ারম্যান আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রয়েছেন। আসন্ন নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে ১২টি উপজেলার মধ্যে শেরপুর, আদমদীঘি এবং সোনাতলা উপজেলায় আওয়ামীলীগ প্রার্থীদের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
অপর ৯টিতে বিএনপির নেতারা স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন। তাদের মার্কা ধানের শীষ না হলেও বিএনপির পরিচয়ে তারা প্রচারণা করছেন। ৯টির মধ্যে ৫টি উপজেলায় আওয়ামীলীগেও বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা না নিলেও বিএনপির তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে।
শনিবার (২ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত ৩ জনকে দল থেকে বহিষ্কার, ৪ জনকে শো-কজ এবং আরও ২৩জনকে বহিষ্কারের তালিকা তৈরি করেছে জেলা বিএনপি। আর এই তালিকা তৈরির পর থেকেই বিএনপির সংকট ফাটলে রূপ নিচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়ের একপক্ষের নেতাকর্মীরা বলছে কতজনকে বহিষ্কার করতে পারে দেখব? আরেকপক্ষের নেতারা বলছে বহিষ্কৃতরা যেন কোনদিন দলে ফিরতে না পারে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে সদ্য বহিষ্কৃত নেতা মাফতুন আহম্মেদ খান রুবেল বার্তা ২৪.কমকে বলেন, ‘বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির চেয়ার পার্সনের সংসদীয় আসন। সেখানে আওয়ামীলীগ থেকে কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন সেটা আমি মেনে নিতে পারি না। এছাড়াও নেতাকর্মী ধরে রাখতে এবং তাদের পক্ষে কথা বলতে এই পদে নির্বাচন করা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘দল আমাকে বহিষ্কার করলেও ধানের শীষে ভোট দেয়ার অধিকার আমি নিজেই সংরক্ষণ করি।’
শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন জেলা বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা বিউটি বেগম। তিনি বার্তা ২৪.কমকে বলেন, ‘দল আমাকে এখনও বহিষ্কার করেনি। আমার সাথে বিএনপির অনেক নেতা রয়েছেন। পাশাপাশি জনসমর্থন রয়েছে ব্যাপক।
দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি জনগণের কাজ করি, জনগণের ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। জনগণের দাবির প্রেক্ষিতেই আমি এবার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপির নেতা হলেও বিএনপি দ্বারাই নির্যাতিত হচ্ছি।’
এদিকে ইউনিয়ন পর্যায়ের একাধিক বিএনপি নেতার সাথে কথা বললে তারা বলেন, ‘আমরা রয়েছি সবচেয়ে বেশি বিপাকে। বিএনপির নেতার পক্ষে কাজ করলেও বিপদ আবার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সম্পর্কের নেতা প্রার্থী হয়েছেন তার পক্ষে কাজ না করলেও হচ্ছে না। আবার যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের অনেকে বলছেন বহিষ্কার তো এর আগেও অনেকেই হয়েছেন নির্বাচিত হতে পারলে দল একদিন টেনে নিবেই।’
তবে জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম বার্তা ২৪.কমকে বলেন, ‘রাজনীতি করলে দলের সিদ্ধান্ত মানতে হবে। যারা মানবে না তাদেরকে রাজনৈতিক দুর্ভোগ পোহাতে হবে। বিএনপি এবার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। দলে ফাটল এবং কোন সংকট নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সুযোগ নেই সেখানে অংশ নিয়ে লাভ কী? বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাদেরকে কি জয়ী হতে দেয়া হবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে। যারা তাদের পক্ষে কাজ করবে তাদের কেউকেও ছাড় দেয়া হবে না।’