নদী খনন করে বানানো হচ্ছে খাল!

নাটোর, দেশের খবর

মাহবুব হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, নাটোর, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 04:48:31

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার আত্রাই এবং গুমনী নদী দু’টি খননের কথা ছিল ১২০ ফুট, কিন্তু খনন করা হচ্ছে ৮০-৮৫ ফুট। আর খননের মাটি ফেলা হচ্ছে নদীতেই। ফলে নদী এখন খালের রূপ ধারণ করছে।

জানা গেছে, পরিকল্পিতভাবে নদী খনন না করায় টাকার যেমন অপচয় হচ্ছে নদীর আয়তনও কমছে। ফলে নদী খননের সুফলের পরিবর্তে আগামী বর্ষায় দুভোর্গের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য বিষয়টি জানার পর মাঝে কাজ বন্ধ থাকলেও কাজের কোনো উন্নতি হয়নি। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।

এদিকে, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় ভুল স্বীকার করে প্রকল্প পরিচালক সাইদুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নদীতে যে মাটি ফেলা হচ্ছে সেটা পরে সরিয়ে নেওয়া হবে ‘

তবে প্রকল্প পরিচালকের এই কথায় আস্থা রাখতে পারছেন না স্থানীয়রা। তাদের প্রশ্ন- পরে এই মাটি সরানোর দায় কে নেবে? স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় ৩০০ ফুট নদীর ৩০-৪০ শতাংশ জায়গা খনন করা হচ্ছে। এতে নদী কেটে নালা তৈরি করা হচ্ছে। আর দুই পাশ সঙ্কুচিত হয়ে নদীর প্রশস্ততা কমে যাচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস বিষয়টি জানতে পেরে বিআইডব্লিউটিএর সচিবসহ অন্য সংসদ সদস্যদের ফোন করে কাজ বন্ধ করে দেন। পরে যথাযথভাবে কাজ করার অঙ্গিকার পেলে কাজ আবারও শুরু হয়। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, নালার মতোই নদী খনন করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নদী দু’টির নাব্যতা ফেরাতে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খনন করে মাটি নদীতেই ফেলছে। এতে নদীর উভয় পাশ সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। বর্ষাকালে এসব মাটি ধুয়ে আবারও ভরাট হয়ে যাবে। তাই জনস্বার্থে খননকাজ বন্ধ করে দিয়েছিলাম।’

তবে কেন নদী আগের মতোই খনন করা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দরকার হলে আবারো কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে। যতদিন না পর্যন্ত ভালোভাবে কাজ করবে, ততদিন কাজ বন্ধ থাকবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ-পথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং (প্রথম পর্যায়) ২৪টি নৌ-পথের নাব্যতার ফিরিয়ে আনতে ৪২ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে বিআইডাব্লিউটিএ। এই প্রকল্পের আওতায় পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার এরশাদনগর থেকে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার যোগেন্দ্রনগর রাবার ড্যাম পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আত্রাই ও গুমানী নদীর খননকাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর প্রতিষ্ঠান ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড। পরে ওয়েস্টার্ন ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দেওয়া হয়।

স্থানীয়রা বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যেভাবে নদী খনন করছে, তাতে সুফলের পরিবর্তে দুর্ভোগ বাড়বে। নদী খনন করে খাল তৈরি করা হচ্ছে। ১৪ ফুট গভীরতায় খনন করার নিয়ম থাকলেও ৮-১০ ফুট খনন করা হচ্ছে।

উপজেলা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আতাহার হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নদী খননের মাটি পাড়ের ওপরে ফেলার নিয়ম থাকলেও এখানে সেটা করা হচ্ছে না। মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নদীতেই ফেলা হচ্ছে। এতে কিছুদিন পরই নদী ভরাট হয়ে যাবে।’

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি মনির হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমার দপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীকে নিয়ে সরেজমিনে নদী খনন কাজ দেখে এসেছি। তারা যেভাবে নদী খনন করছে, অনেকটা খাল কেটে কুমির আনার মতো।’

তিনি আরো বলেন, ‘সিডিউলে ১২০ ফুট প্রশস্ত এবং ১৪ ফুট গভীর করার কথা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তা মানছে না। তাদের ইচ্ছামতো নদী খনন করছে। তাছাড়া নদী খননের আগে তারা নদীর সীমানাও নির্ধারণ করেনি। ফলে সরকারি টাকা অপচয় ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না।’

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের একাংশের সাইড ম্যানেজার মফিজুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘দরপত্রে উল্লেখ আছে ৮০-৮২ ফুট প্রস্থ ও ১০ ফুট গভীরতা নদীটি খনন করতে হবে এবং খননের জায়গা থেকে ৩৮-৪০ ফুট দূরত্বে মাটি ফেলতে হবে। সেই মোতাবেক আমরা কাজ করছি।’

এবিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নদী খননের কোনো মাটি নদীর মধ্যে থাকবে না। সব সরিয়ে নেওয়া হবে। এতে নদী প্রশস্ত হবে এবং গভীরতাও বাড়বে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর