টেকনাফ স্থলবন্দরে মিয়ানমারের কাঠ আমদানি বন্ধ

কক্সবাজার, দেশের খবর

নূরুল হক, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, টেকনাফ | 2023-08-26 04:03:35

কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে মিয়ানমারের কাঠ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এর ফলে সীমান্ত বাণিজ্যে রাজস্ব আদায়ে দেখা দিয়েছে নেতিবাচক প্রভাব। মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে কাঠ আমদানি বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। পাশাপাশি বন্দর শ্রমিক ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের মাঝে বিরাজ করছে হতাশা।

শুল্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, টেকনাফ স্থলবন্দরে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচটি কাঠ বোঝাই ট্রলার এসেছে। এর পর থেকে আর কোনো কাঠ বোঝাই ট্রলার মিয়ানমার থেকে বন্দরে আসেনি। ওই মাসে কাঠ আমদানি থেকে মাত্র ৩০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। অথচ এর আগে জানুয়ারি মাসে স্থলবন্দরে কাঠ আমদানি করে ২ কোটি ৭২ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। প্রতিমাসে মিয়ানমার থেকে কাঠ আমদানি করে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব আদায় করে আসছিল। চলতি মার্চ মাসের এখন পর্যন্ত কাঠ বোঝাই কোনো ট্রলার আসেনি। সেদেশের সমস্যার কারণে টেকনাফ সীমান্ত বাণিজ্যে পণ্য আমদানিতেও এর প্রভাব পড়েছে।

শুল্ক বিভাগ সূত্রে আরও জানা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসে মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি করে ১৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। এ মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক মাসিক টার্গেট নির্ধারণ করেছিল ১৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আদায়কৃত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ কোটি টাকা বেশি। এই মাসে মিয়ানমারের পণ্য আমদানি করা হয়েছে ৪৪ কোটি ৯৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকার। বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানি করা হয়েছে ১ কোটি ৫১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তাছাড়া শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে ১ হাজার ৯৬০টি গরু, ৮৫১টি মহিষ আমদানি করে ১৪ লাখ ৫ হাজার ৫শ’ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। এছাড়া গত জানুয়ারি মাসে টেকনাফ শুল্ক ষ্টেশনে রাজস্ব আদায় করেছে ২২ কোটি ১০ লাখ টাকা। সেই মাসে টার্গেট ছিল ১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। টার্গেটের চেয়ে ৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। তবে সব পণ্য আমদানি স্বাভাবিক থাকলে রাজস্ব আদায় অনেক বেশি আদায় করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থলবন্দর ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ মনির বলেন, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় সেদেশের ব্যবসায়ীরা দৌঁড়ের ওপর ছিল। এমনকি সেদেশের সীমান্তে নিরাপত্তা কড়াকড়ি আরোপ করায় ব্যবসায়ীদের আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় সেদেশ থেকে কাঠ পাঠানো সম্ভব হয়নি। যার ফলে কাঠ আমদানি বন্ধ থাকে। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে কাঠ ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা।’ তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কাঠ আমদানি আবার স্বাভাবিক হবে বলে জানান তিনি।

বন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট ও ব্যবসায়ী মো. সেলিম বার্তা২৪.কমকে জানান, দেশে চাহিদা পূরণে মিয়ানমার থেকে কাঠ আমদানি করা হয়। বর্তমানে সেদেশে সমস্যার ফলে কাঠ আমদানি বন্ধ রয়েছে। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও ঝুঁকি নিয়ে পণ্য আমদানি করা হয়। তবে কাঠ আমদানি নিয়ে মিয়ানমারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। সেদেশের অবস্থা স্থিতিশীল হলে কাঠ আমদানি আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।

টেকনাফ স্থল বন্দরের কাঠ শ্রমিক মাঝি মো. করিম ও আজগর বলেন, প্রায় একমাস ধরে মিয়ানমার থেকে কাঠ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এর ফলে শ্রমিকদের নানা সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে কাঠ আমদানি হলে শ্রমিকরা কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এখন কোনো কাজ না থাকায় তাদের বেকার দিন কাটাতে হচ্ছে। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে আছি আমরা।

টেকনাফ স্থলবন্দর শুল্ক কর্মকর্তা শংকর কুমার দাশ বার্তা২৪.কমকে জানান, সরকার প্রতিবছর কাঠ আমদানি থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করছে। গত জানুয়ারির শেষের দিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা শুরু হলে কাঠ আমদানি কমে যায়। এ সময় মিয়ানমার থেকে আমদানি করা অন্য পণ্যতেও এর প্রভাব পড়ে। এত কিছুর পরও গত ফেব্রুয়ারি মাসে টার্গেটের চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়েছে। বাণিজ্য-ব্যবসাকে আরও গতিশীল করতে তিনি সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর