কমেছে রোহিঙ্গাদের ‘মানবিক সহায়তা’, বাড়তে পারে সংকট

কক্সবাজার, দেশের খবর

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 21:13:48

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ‘মানবিক সহায়তা’ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। আগের মতো দাতা গোষ্টিগুলো তেমন সাড়া দিচ্ছে না। ফলে ‘মানবিক সহায়তা’র অভাবে সামনে বাংলাদেশ গভীর সংকটে পড়তে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জেনেভায় রোহিঙ্গাদের খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ নানা খরচ মেটাতে জয়েন্ট রেসপন্স প্নান (জেআরপি) উপস্থাপন করা হয়। ওই প্রস্তাবনায় এ বছরের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু সেখানে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবা প্রদানে বেগ পেতে হচ্ছে সরকার ও জাতিসংঘকে। এছাড়াও রোহিঙ্গাদের সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে অপব্যয়ের অভিযোগ তুলেছেন দেশি এনজিওগুলো।

আরো জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের আপত্তিতে বন্ধ আছে প্রথম পর্যায়ের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। পাশাপাশি যোগ হয়েছে ভারত থেকে আসা কয়েক হাজার রোহিঙ্গার চাপ। এছাড়া এখনও সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এমতাবস্থায় রোহিঙ্গাদের সংখ্যা, চাহিদা ও সংকট বাড়লেও তাদের প্রতিদিনের চাহিদার যোগান কমেছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা এনজিও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের প্রতি দাতা গোষ্টিগুলোর আগের মতো জৌলুস নেই।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের সহায়তায় গত বছর সংস্থাটির বাজেট ছিল ৯৫১ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু এ বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ৯২০ মিলিয়ন ডলারে।

ভিল সোসাইটি এনজিও ফোরামের কো-চেয়ারম্যান আবু মোর্শেদ চৌধুরী বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘স্বাস্থ্য, খাদ্যসহ রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ব্যয় প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কিন্তু দাতা সংস্থাগুলো এখন আগের মতো সাড়া দিচ্ছে না। তাই সামনে সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশ। কারণ দাতা সংস্থাগুলো সাড়া না দিলে সরকারকেই রোহিঙ্গাদের ব্যয় বহন করতে হবে।’

কোস্টট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘বিদেশি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে কেন আমরা কিছু তৈরি করতে পারলাম না, আদৌ কি সেই ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা আছে? বিদেশি কর্মকর্তাদের বিলাসীতায় অনেক টাকা খরচ করা হচ্ছে। কিন্তু এদেশের কর্মকর্তারা দায়িত্বে থাকলে বিদেশিদের পেছনে এত খরচ হতো না। ফলে ২০১৯ সালের শেষ দিকে বড় ধরণের সংকটে পারতে পারে বাংলাদেশ।’

তিনি আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সহায়তায় পরিমান কমে গেলেও বিলাস বহুল গাড়ি ব্যবহার ও বিদেশিদের পিছনে অপব্যয়ী মনোভাব থাকায় সংকট আরো বেড়েছে।’

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের মুখপাত্র সৈকত বিশ্বাস বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের মান উন্নয়নের বিষয়টি মাথায় রেখে জিআরপি প্রণয়ন করা হয়। আশা করছি, দাতা সংস্থাগুলো আগের মতো সাড়া দেবে।

শরণার্থী বিষয়ক কমিশনের হিসেব অনুযায়ী, প্রাথমিক নিবন্ধনে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় ধরে তাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর