আজ নারী দিবস: বেতন বৈষম্যের শিকার শুঁটকি মহালের নারীরা

কক্সবাজার, দেশের খবর

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 05:38:05

আজ (৮ মার্চ) বিশ্ব নারী দিবস। এ দিবসকে ঘিরে দেশব্যাপী বিভিন্ন শ্রেণি পেশাজীবীদের নানা আয়োজন আছে। তবে কক্সবাজার নাজিরারটেকের শুঁটকি মহালের নারী শ্রমিকদের অভিযোগ, পেটের দায়ে ও সংসার চালাতে তারা পুরুষের সমান কাজ করেও ন্যায্য মজুরি পান না। তাই তারা দ্রুত এই বৈষম্যের অবসান চান।

জানা গেছে, নাজিরারটেক শুঁটকি মহালে কাজ করেন অন্তত ৪০ হাজার শ্রমিক। তাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। সেখানে পুরুষ শ্রমিকরা সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাজ করে মজুরি পান ৫০০-৬০০ টাকা, কিন্তু একই সময় পর্যন্ত কাজ করে নারী শ্রমিকরা পান মাত্র ৩০০ টাকা।

শামসুন নাহারের (৬০) বাড়ি মহেশখালীতে। স্বামী মৃত মীর কাশেম আলী। তাদের সংসারে ৩ সন্তান। কিন্তু ভাগ্যে’র কাছে হেরে গেছেন তিনি। স্বামী না থাকায় সন্তানরাও ছেড়ে গেছেন তাকে। ফলে বাধ্য হয়ে গত দুই বছর ধরে কাজ করছেন কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেকের শুঁটকি মহালে। কিন্তু সেখানেও প্রতিনিয়ত বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তিনি।

শামসুন নাহার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'স্বামী মারা যাওয়ার পর সন্তানরাও আমাকে ছেড়ে গেছে। কিন্তু পেটের দায়ে শুঁটকি মহালে কাজ করতে হয়। পুরুষদের সমান কাজ করে বেতন পাই তাদের অর্ধেক। এখানে যখন কাজ শুরু করি তখন মজুরি ছিল মাত্র ৫০ টাকা। কিন্তু এখন মজুরি ৩০০ টাকা হলেও সেটা দিয়ে সংসার চলে না।'

সমিতিপাড়ার নুর বানুর (৫১) দুই মেয়ে ও এক ছেলে আর স্বামীসহ পাঁচজনের সংসার। ছেলেটি প্রতিবন্ধী। সংসারের টানাপোড়েনের কারণে নাজিরারটেক শুঁটকি মহালে তিনিও কাজ নেন। নুর বানু বার্তা২৪.কম-কে জানান, সেই ভোর থেকে কাজ শুরু হয়, যা চলে সূর্য ডোবা পর্যন্ত। কিন্তু ন্যায্য মজুরি পাই না। কেউ আমাদের কষ্ট দেখে না, এমনকি খবরও নেন না।

নাজিরারটেক শুঁটকি ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আতিক উল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'প্রতি মৌসুমে শুধুমাত্র নাজিরারটেক শুঁটকি মহালেই উৎপাদন হয় প্রায় ২০ হাজার টন শুঁটকি। যার বাজার মূল্য ২০০ কোটি টাকার বেশি। উৎপাদিত এসব শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানিও করা হয়।'

এদিকে, শুঁটকি মহালে নারী ও পুরুষের বেতন বৈষম্যের কথা স্বীকার করে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, দেশের বৃহত্তম এ শুঁটকি মহাল থেকে সরকারকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব দেওয়া হয়। কিন্তু নাজিরারটেকে আসতে পরিকল্পিত বা চলাচলের উপযোগী কোনো রাস্তা নেই। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয়। ফলে উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। তাছাড়া বিদ্যুতের অভাবে কোনো হিমাগার গড়ে না ওঠায় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির সম্মুখীন হন।

নাজিরারটেক শুঁটকি মহালের ব্যবসায়ী মো. মনির উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'শীত মৌসুম শুরুর আগে থেকে নাজিরারটেক শুঁটকি মহালেও শুঁটকি উৎপাদন শুরু হয়েছে। এবারও রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্যা পোপা, কচাদা, হাঙ্গর, ফাইস্যা, নাইল্যামাছসহ ২০-৩০ প্রজাতির শুঁটকি এ মহালে উৎপাদন করা হচ্ছে।'

নারী শ্রমিকদের বেতন বৈষম্যে’র বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'পুরুষ শ্রমিকরা ভারি কাজগুলো করে, তাই তাদের বেতন বেশি। কিন্তু নারী শ্রমিকরা শুধু দাঁড়িয়ে বা বসে কাজ করেন।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর