নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। এক সময় শাখা-প্রশাখাসহ প্রায় ৮শ নদ-নদী বিপুল জলরাশি নিয়ে ২৪ হাজার ১৪০ কিলোমিটার জায়গা দিয়ে প্রবাহিত হতো। কিন্তু কালের বিবর্তন আর নদী শাসনের ফলে কমে গেছে নদ-নদীর পরিমাণ।
তেমনি একটি নদী ‘শাখা বরাক’। হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। এক সময় এই নদীর উপরই নির্ভর ছিল নবীগঞ্জ উপজেলার অর্থনৈতিক অবস্থা। জেলেদের মাছ আহরণসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সারাদেশের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল ‘শাখা বরাক’ নদী।
কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। দখল আর দূষণের কবলে পড়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদীটি। কিছু অংশে গতিপথ থাকলেও অধিকাংশ অংশে নদীকে খুঁজে পাওয়াই দায়। রাস্তা-ঘাট আর বড় বড় ইমারত তৈরি করা হয়েছে নদীর উপরে। যেসব অংশে নদীর কিছুটা অস্তিত্ব রয়েছে সেখানেও ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা।
নদীটি রক্ষায় আন্দোলন করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার, খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপারসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। কিন্তু বার বার আন্দোলন করেও কোনো ফল পাচ্ছে না তারা। উল্টো বিভিন্ন প্রভাবশালীদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে তাদেরকে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সময় ‘শাখা বরাক’ নদী দিয়ে লঞ্চ, স্টিমার, জাহাজ চলাচল করত। নবীগঞ্জ থেকে সুরমা, কুশিয়ারা দিয়ে ভৈরব এসে বিভিন্ন মালামাল আমদানি-রপ্তানি করা হতো। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যমও ছিল এই নদীটি। কিন্তু বর্তমানে এই নদী দিয়ে লঞ্চ-স্টিমার-জাহাজতো দূরের কথা, একটি ছোট নৌকাও যেতে পারে না। কচুরিপানা আর ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর থাকায় ঠিকভাবে বৃষ্টির পানিও নিষ্কাশন হতে পারে না।
নবীগঞ্জ উপজেলার বাউসা গ্রামের আব্দুর রশিদ জানান, দখলদারদের কারণে নদীটি আজ অস্তিত্ব সংকটে। অথচ এক সময় এই নদী দিয়ে লঞ্চ, স্টিমারসহ বড় বড় জাহাজ চলাচল করত।
তিনি বলেন, নদীটি দখলমুক্ত ও খনন করা প্রয়োজন। এতে এলাকার পরিবেশ সুন্দর থাকাসহ কৃষকরা জমিতে দেয়ার জন্য পানি সংকট থেকে মুক্তি পাবে।
শাহ তাজউদ্দিন কুরেশী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাকিব আহমেদ বলে, ‘বই পড়ে শাখা বরাক নদী সম্পর্কে জেনেছি। কিন্তু নিজের বাড়ির পাশে নদীটি থাকলেও এর স্বাভাবিক রূপ দেখতে পারিনি।’
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সহ-সভাপতি কবি তাহমিনা বেগম গিনি বলেন, ‘বার বার বাপাসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নদীটি রক্ষায় আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। যার ফলে দিন দিন শাখা বরাকসহ দেশের সবগুলো নদ-নদী হারিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘দ্রুত নদীগুলো রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে এক সময় বাংলাদেশে নদীর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।’
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদ বীন-হাসান জানান, গতমাসে এক সভায় শাখা বরাক নদীকে দখলমুক্ত করার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনের কারণে তা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে দ্রুত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে বলেও জানান তিনি।
খননের বিষয়ে তিনি জানান, প্রথমে দখল উচ্ছেদ করতে হবে। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে খননের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম জানান, বর্তমানে সরকার নদী খননের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় হবিগঞ্জের ১৪টি নদীর খনন কাজ চলছে। পর্যাক্রমে শাখা বরাক নদীও খনন করা হবে।