সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাছখোলা ক্লাব মোড় থেকে বাজার পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তা। সংস্কারের অভাবে রাস্তাটির কোথাও আস্ত নেই। খানা-খন্দে ভরা রাস্তাটিতে চলাচল করতে গিয়ে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। পার্শ্ববর্তী বেতনা নদীর চরে গড়ে ওঠা ইটভাটার ট্রলি আর ট্রাকের কারণে রাস্তাটি ধ্বংস হয়ে গেছে।
অথচ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ অনেক জনপ্রতিনিধির বাড়ি এই এলাকায়। রাস্তাটি সাতক্ষীরা সদর ও তালা উপজেলার সাথে যুক্ত। দুই উপজেলার অন্তত ১২ গ্রামের মানুষ এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন।
জনদুর্ভোগ সহ্য করতে না পেরে গ্রামবাসী নিজ উদ্যোগে রাস্তাটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন। আলাউদ্দিন নামের এক যুবকের অনুপ্রেরণায় রাস্তা সংস্কারে ঝুড়ি কোদাল নিয়ে নেমেছেন গ্রামবাসী।
বুধবার (১৩ মার্চ) সকালে স্থানীয় ‘মাছখোলা প্রত্যাশা ক্লাব’ -এর সভাপতি মো. আলাউদ্দিনের অর্থায়নে ক্লাবের ১০১ জন সদস্য স্বেচ্ছায় শ্রম দিয়ে রাস্তা সংস্কারে হাত দেন। তারা বলেন, ১৮ বছর ধরে ভাঙা রাস্তায় চলাচল করি। বৃষ্টি হলেই এ রাস্তায় সাঁতার দিতে হয়। আঠারো বছরে কেউ কথা রাখেনি। তাই ঝুড়ি কোদাল নিয়ে রাস্তা সংস্কারে নেমেছি।
জনপ্রতিনিধি থাকতে আপনারা কেন স্বেচ্ছায় রাস্তাটি সংস্কার করছেন, জানতে চাইলে প্রত্যাশা ক্লাবের সভাপতি আলাউদ্দিন বলেন, আমাদের এ রাস্তাটি অনেক অবহেলিত। ২০০০ সালের ভয়াবহ বন্যার পর থেকে কোনো জনপ্রতিনিধি রাস্তাটি সংস্কারের উদ্যোগ নেননি। ইট, বালু ও খোয়া দিয়ে দ্রুত গতিতে রাস্তা সংস্কারের কাজ করছি, যাতে আসন্ন বর্ষায় আবারো সাঁতরাতে না হয়। নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই বদলানোর চেষ্টা করছি।
ক্লাবটির কয়েকজন সদস্য জানান, রাস্তার যে অবস্থা তাতে একটি রিকশা ও ভ্যান নিয়েও আসা যায় না। আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়। ভোটের সময় কত প্রার্থী এসে রাস্তা সংস্কার করার কথা বলে ওয়াদা করে, কিন্তু ভোট আসে, ভোট চলে যায়, রাস্তার কথা কারও মনে থাকে না।
মাছখোলা গ্রামের আমিরুল ইসলাম জানান, তালা উপজেলা ও সদর উপজেলা থেকে সাতক্ষীরা শহরে যাওয়া-আসার একমাত্র রাস্তা এটি। অথচ খানা-খন্দে ভরা রাস্তাটি দিয়ে শহর থেকে ১০০ টাকা দিলেও কোনো ভ্যান, ইজিবাইক চলাচল করতে চায় না। এমনকি এই এলাকার কোনো মানুষ অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা হয় না।
মাছখোলা ক্লাব মোড় থেকে বাজার পর্যন্ত এই রাস্তা সংস্কারের কাজে কোনো জনপ্রতিনিধিকে এখনও পাশে পাওয়া যায়নি বলে জানান ক্লাবের সদস্যরা।