চায়ের কথা মনে হলেই ভেসে ওঠে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের চিত্র। কারণ সেখানেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি চা বাগান। বর্তমানে সেখানের চা বাগানগুলোতে কচি পাতা উঁকি দিচ্ছে। প্রতিটি টিলা-সমতল প্রান্তরে সবুজের সমারোহ। সেই সতেজ আর স্নিগ্ধ রূপ নিয়ে দুইটি পাতা একটি কুঁড়ি এখন মাথা তুলেছে।
জানা গেছে, প্রতি বছরের মতো কয়েকদিন আগে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে এসব চা গাছের মাথা ছাঁটাই (প্রুনিং) করা হয়েছে। এরপর চলে অপেক্ষার পালা। চা শ্রমিক, সর্দার (দলের প্রধান), বাবু (ক্লার্ক) এবং ম্যানেজাররা (ব্যবস্থাপক) গভীর আগ্রহে গাছে কুঁড়ি আসার অপেক্ষায় থাকেন।
তবে কয়েকদিন আগের বৃষ্টিতে স্বস্তি ফেরে তাদের মাঝে। সেই বৃষ্টির ফোঁটায় উর্বর হয় প্রকৃতি। আর সেই উর্বরতার দিগন্ত বিস্তৃত উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে হাসতে থাকে দুইটি পাতা একটি কুঁড়ির দল।
গত মঙ্গলবার ও বুধবার (১২ ও ১৩ মার্চ) জেরিন চা বাগান, ইস্পাহানি চা বাগান, নুরজাহান চা বাগান, বিটিআরআই চা বাগান, মাজদিহি চা বাগান, প্রেমনগর চা বাগানসহ কয়েকটি চা বাগান ঘুরে দেখা গেছে, সব গাছেই কুঁড়ি এসেছে। ঘনসবুজ পাতাগুলো গভীর সৌন্দর্যে রাঙা হয়ে আছে। চা বাগানে এখন সবুজ জেগে উঠেছে। দেখে মনে হয় পুরো বাগানে সবুজ প্রলেপ বিছানো।
চা বাগানের শ্রমিক রতন গোয়ালা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘প্রায় দুই মাস আগে গাছগুলো ছেঁটে দেওয়া হয়। কয়েকদিন আগের বৃষ্টি পেয়ে এখন চা গাছগুলোতে নতুন কুঁড়ি আসতে শুরু করেছে। যে চা গাছের কুঁড়িগুলো অন্যগুলোর চেয়ে বেশি বড় হয়ে গেছে সেগুলোকে সংগ্রহ করা শুরু হয়েছে।’
এদিকে মৌলভীবাজারের চা শিল্পাঞ্চলে চলতি চা উৎপাদন মৌসুমের (২০১৯) প্রথম চা পাতা চয়ন (টিপিং) শুরু হয়েছে। শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী বলেন, তাদের চা বাগানগুলোতে ১২ মার্চ থেকে চা পাতা চয়ন শুরু হয়েছে। ডিসেম্বর মৌসুম শেষে চা গাছ ছাঁটাই অর্থাৎ গ্রুনিংয়ের পর নিয়মানুযায়ী দুই মাস ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকে। বৃষ্টির পর নতুন কুঁড়ি গজালে শুরু হয় পাতা চয়ন এবং উৎপাদন।’
মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাতকে 'গোল্ডেন রেইন' হিসেবে উল্লেখ করে তিনি জানান, এই বৃষ্টি চা গাছের জন্য ভালো সুফল বয়ে আনবে। বিশেষ করে ইয়াংটির জন্য খুব ভালো। ফলে চায়ের রেড স্পাইডার কমে যাবে।
ইস্পাহানির জেরিন চা বাগানের ব্যবস্থাপক সেলিম রেজা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘অনেক চা বাগানে এখন পাতা চয়নের কাজ শুরু হয়েছে। পাতা চয়নকে ইংরেজিতে ট্রিপিং বলে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বাগানে গত ৪ মার্চ থেকে প্রথম পাতা চয়ন শুরু হয়। এ পাতা চয়ন চলবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। তারপর আবার চা গাছের ডাল ছাঁটাই শুরু হবে। চা গাছের ডাল ছাঁটাইকে ইংরেজিতে প্রুনিং বলে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি দুই মাস চা বাগানে পাতা চয়নের কাজ পুরোপুরি বন্ধ থাকে।’
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিটিআরআই) পরিচালক মোহাম্মদ আলী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আগাম বৃষ্টি চায়ের জন্য সুফল বয়ে এনেছে। ফলে অনেক বাগানে পাতা চয়ন শুরু হয়েছে।’