বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ধরণের ফুলের চাষ দিন দিন বাড়ছে। ফুল চাষ করে অল্প সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় অনেকেই কৃষি জমিতে খাদ্য শস্যের পরিবর্তে ফুল চাষ করছেন। আবার অনেক বেকার যুবক নিজের জমি না থাকায় অন্যের জমি ইজারা নিয়ে ফুল চাষ করছেন।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, গত ছয় বছরে বগুড়া জেলায় ২৪ হেক্টর কৃষি জমিতে ফুলের চাষ বেড়েছে। পাশাপাশি বিদেশি ফুল চাষ করে আমদানি কমাতে চেষ্টা করছেন স্থানীয় ফুল চাষীরা।
ফুলচাষীরা জানান, বগুড়া জেলায় কমপক্ষে ১৫ প্রকারের ফুলের চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, বাগান বিলাস, চন্দ্র মল্লিকা, ডালিয়া, কসমস, দোলন চাঁপা, নয়নতারা, মোরগঝুটি, কলাবতী ও জবা প্রধান।
এসব ফুলের অধিকাংশ কয়েক বছর আগে দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে বগুড়ায় আসতো। কিন্তু এখন বগুড়ায় চাষ করা ফুল এ জেলার চাহিদা পূরণ করে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।
বগুড়া শহরের ফুল বব্যবসায়ী রুবেল মিয়া বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও বিভিন্ন দিবস ও বিয়ের অনুষ্ঠানে ফুলের ব্যবহার ছিল। কিন্তু সৌখিন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় ফুল অনেকের কাছে এখন নিত্য প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।’
‘শহরের অসংখ্য মানুষ এখন বাসার জন্য প্রতিদিন ফুল কিনে থাকে। এছাড়াও সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন অফিসে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন ফুল কেনা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন দিবসে শহর ছাড়াও গ্রামের মানুষের মধ্যেও ফুল কেনার প্রবণতা বেড়ে গেছে।’
দেশি ফু্লের পাশাপাশি মানুষ এখন ঝুঁকছেন বাহারি রঙের বিদেশি ফুলের দিকে। এ কারণে চাহিদা মেটাতে আমদানি করতে হচ্ছে বিদেশি ফুল। তবে আমদানি কমাতে এরই মধ্যে বগুড়া সদরের গোকুল এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে বিদেশি জাতের ফুলের চাষ শুরু হয়েছে।
বগুড়ায় সবচেয়ে বেশি ফুল চাষ হয় সদর উপজেলায়। এর মধ্যে বাঘোপাড়া, গোকুল মাহাস্হান এলাকায় সবচেয়ে বেশি ফুল চাষ হয়। এসব এলাকায় প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনায়, ক্ষেত-খামারে গড়ে উঠেছে কম বেশি ছোট বড় নার্সারী।
গোকুল উত্তরপাড়া গ্রামের ফুলচাষী সাবলু মিয়া জানান, তিনি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছেন। এই জমিতে অন্য ফসল চাষ করে লাভ তো দুরের কথা খরচই উঠতো না।
তিনি জানান, এক বিঘা জমিতে ফুল চাষ করলে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা লাভ হয় বছরে। এ কারণে কৃষি জমিতে অন্য ফসল চাষ বন্ধ করে দিয়ে ফুল চাষ শুরু করছেন।
গোকুল এলাকার ফুলচাষী আব্দুল হান্নান বলেন, ‘চার বছর ধরে ফুল চাষ করে নিজে স্বাবলম্বী হয়েছি। পাশাপাশি নার্সারিতে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।’
মহাস্থান এলাকার জসিম, বেলাল ও মনোয়ার জানান, তাদের নিজের কোনো জমি ছিল না। তারা চাকরির পেছনে না ঘুরে অন্যের জমি ইজারা নিয়ে ফুল চাষ শুরু করেন। এখন তারা সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনা ছাড়াও নিজস্ব নার্সারির জন্য জমি কিনেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কামাল উদ্দিন তালুকদার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘জেলার সব উপজেলাতেই কম বেশি ফুল চাষ হয়ে থাকে। তবে বগুড়া সদর, সোনাতলা, শিবগঞ্জ ও শেরপুর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফুলচাষ হয়ে থাকে বেশি।’
তিন জানান, এ জেলায় ২০১২ সাল থেকে ফুলের চাষ বাড়ছে। ২০১২ সালে বগুড়া জেলায় ফুলের চাষ হয়েছিল সাড়ে চার হেক্টর জমিতে। আর এখন ফুলের চাষ হচ্ছে ৩০ হেক্টর জমিতে।