জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ‘মিনা কার্টুন প্রদর্শনী ও উপকরণ মেলা’ না করে বরাদ্দের টাকা লুট করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে।
এছাড়া শিক্ষা সপ্তাহের র্যালিতে অংশগ্রহণ করা প্রত্যেক স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য ১৫ টাকা মূল্যের নাস্তার বরাদ্দ থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে ৬০ পয়সা মূল্যের চকলেট দিয়ে বিদায় দেয়া হয়েছে। শিশুদের নাস্তার টাকা লুটের ঘটনা জানাজানি হলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
জানা গেছে, ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক ও শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে গৌরীপুর উপজেলা পর্যায়ের ৪শ শিশুর নাস্তার জন্য ৬ হাজার টাকা, মাইকের জন্য ১ হাজার ৫শ টাকা, প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুনের জন্য ৪ হাজার ৫শ টাকা, আলোচনা সভার আপ্যায়নের জন্য ২ হাজার টাকা, কো-অর্ডিনেটের (ইউইও) জন্য ৬শ টাকা, সহায়ক কর্মকর্তার জন্য ৫শ টাকা, রিসোর্স পারসন (ডিপিইও/এডিপিইও) ২ জনের জন্য ১ হাজার ৬শ টাকা, তাদের যাতায়াত ভাতা ২ হাজার টাকা, ব্যানার ৮শ টাকা ও প্রশাসনিক ব্যয় ২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
গত ১৩ মার্চ বুধবার জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ শুরু হয়। কর্মসূচির প্রথমদিন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার মিনা কার্টুন প্রদর্শনী ও শিক্ষা উপকরণ মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে তার আয়োজন করা হয়নি।
এদিকে গত বুধবার শিক্ষা সপ্তাহের র্যালিতে অংশ নেয়া ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী রুনা আক্তার জানায়, র্যালি শেষে তাকে দেয়া হয়েছে একটি চকলেট। যার মূল্য ৫০/৬০ পয়সা হবে। তার সঙ্গে থাকা ছাত্র জুয়েল মিয়া জানায়, সে পেয়েছে দুটি চকলেট।
অভিযোগের বিষয়ে সোমবার (১৮ মার্চ) উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম খান জানান, শিক্ষার্থীদের চকলেট দেয়া হয়েছে। বরাদ্দের টাকা জেলায় সমন্বয় করা হয়েছে। পাশাপাশি গোলকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মিনা কার্টুন প্রদর্শনী ও উপকরণ মেলা চলছে।
শিক্ষা কর্মকর্তার বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে ওই বিদ্যালয়ে গেলে সেটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। এ সময় বারান্দায় ভাঙা ইটের টুকরো, বোতল, পাট ও প্লাস্টিকের বস্তা পড়ে থাকতে দেখা যায়।
সাংবাদিক দেখে সেখানে হাজির হন উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের অফিস সহায়ক মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, এখানে কোনো মেলা হচ্ছে না।
চান্দের সাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসরিন বিনতে ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছর মেলা হলেও এবছর শিক্ষা অফিস মেলার আয়োজন না করে টাকা আত্মসাৎ করেছে। শিক্ষার্থীদের নাস্তার বদলে চকলেট দিয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী আবার চকলেটও পায়নি। এই বিষয়গুলো অত্যন্ত দুঃখজনক।’
এ বিষয়ে কথা বলতে ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হকের মোবাইলে একাধিক বার ফোন দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।