শেষ দিনে ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে বিরহের সুর

কুষ্টিয়া, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, কুষ্টিয়া, বার্তা২৪.কম | 2023-08-23 13:28:37

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে চলছে বাউল সাধুদের মিলনমেলা ‘সাধুর হাট’। বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইজির দোল পুর্ণিমায় স্মরণোৎসবে এবারও রয়েছে অসংখ্য মানুষের সরব উপস্থিতি।

সাঁইজির প্রাণের টানে এই ধামে তিন দিনের এই আয়োজনে সাধু-গুরু বাউলেরা ছাড়াও সাধারণ দর্শনার্থীদের ভিড়ও চোখে পড়ার মতো। গত বুধবার (২০ মার্চ) শুরু হওয়া এই স্মরণোৎসব শুক্রবার (২১ মার্চ) রাতে শেষ হবে।

বাউলের চারণভূমিতে দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার ভোরে গোষ্ঠ গানের মধ্য দিয়ে বাউলদের দিনের আচার অনুষ্ঠান শুরু হয়। সকালের অধিবাসে হাজার হাজার লালন-ভক্ত, সাধু-গুরু পায়েস ও মুড়ির বাল্যসেবা গ্রহণ করেন। দুপুরে তারা মরা কালী গঙ্গায় গোসল সেরে দুপুরের খাবার পুণ্যসেবা গ্রহণ করেন। পুণ্যসেবার মধ্যে ছিল ভাত, মাছ, তিন পদের সবজি তরকারি ও দধি।

বাউলরা বিশ্বাস করেন শুদ্ধ আত্মায় মুক্তি। আর মুক্তির আশায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাধু সংঘে ছুটে আসেন তারা।

লালন একাডেমি সূত্রে জানা যায়, এবার প্রায় ছয় হাজার বাউল ভক্ত দর্শনার্থী একসঙ্গে বসে ত্রিব্যাঞ্জন দিয়ে ‘আল্লা আলেক’ এর নাম করে পুণ্যসেবা গ্রহণ করেন। পুণ্যসেবায় ভাত, সবজি, মাছ, ডাল ও দধি খেতে দেওয়া হয় বাউলদের।

দরবেশ ফকির নহীর শাহ জানান, সাঁইজির ধামে বছরে দু’টি অনুষ্ঠানে নয়, পার্থিব জীবনে এই মর্মবাণী উপলব্ধি করতে হবে সবাইকে। এখানকার আয়োজনে যোগ দেওয়ার জন্য বাউলদের কোনো চিঠি দেওয়া হয় না, জানানো হয় না নিমন্ত্রণ। তারপরও এক অদৃশ্য সুতোর টানে এরা দলে দলে ছুটে আসেন এ বাউল ধামে। প্রাপ্তি যাই হোক না কেন, নিজেকে শুধরিয়ে আত্মশুদ্ধি অর্জন করায় তাদের মূল উদ্দেশ্য। তবে অনেকে আবার লালনের মূল আদর্শের তত্ত্ব মেনে বাউল ভক্তদের আনুষ্ঠানিকতা পালনের আহবান জানান।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বাউলভক্তরা জানান, সাঁইয়ের জীবদ্দশায় শুধু তাঁর ভক্ত আর শিষ্যদের নিয়ে এই স্মরণোৎসব করতেন। সেই নিয়ম মেনেই বাউলরা ভাটায় আসেন, উজানে ফিরে যান যে যার আপন নিবাসে। প্রকৃত বাউলরা সরকারি অনুষ্ঠানের ব্যাপারে খোঁজ-খবরও রাখেন না। তাদের মঞ্চে ডাকলেও তারা আসন ছেড়ে ওঠেন না। লালন আখড়ার আশপাশে ও একাডেমির নিচে যারা আসন গাড়েন তারা সাঁইকে ভক্তি আর আরাধনায় নিমগ্ন থাকেন। কখনো স্থান ত্যাগ করেন না।

ঢাকার দক্ষিণ মহানগরীর ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হোসাইন হায়দার হিরু এসেছেন ছেউড়িয়ার এই অনুষ্ঠানে। বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, গ্রামীণ ঐতিহ্য সংস্কৃতি ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত আছি। তবে এই ছেউড়িয়ায় গত তিন বছর ধরে নিয়মিত আসি। পুরো তিন দিন ধরে বন্ধু-স্বজনদের সাথে নিয়ে বেশ উপভোগ করি। গ্রাম বাংলার গানের অনুরাগী হওয়ায় ছেউড়িয়ায় লালনের এই ধামে পদায়ন। এখানকার লালন শিল্পী ওস্তাদ শফি মন্ডলের গান বেশ ভালো লাগে। তবে ব্যান্ডের দিকে তাল মেলাতে গিয়ে লালনের প্রকৃত সুর পরিবর্তন হয়েছে।

লালন একাডেমির সভাপতি ও কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন জানান, উৎসবের শেষ দিন শুক্রবার রাতে সাধক লালন ফকিরের জীবন ও কর্মের ওপর নিয়মিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির থাকবেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া। পরে লালন মঞ্চে চলবে রাতভর লালন সঙ্গীত।

এ সম্পর্কিত আরও খবর