প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ কুচিয়া। তবে উত্তরাঞ্চল থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০০ টন কুচিয়া মাছ রপ্তানি হচ্ছে চীন ও থাইল্যান্ডে।
ফলে বাণিজ্যিকভাবে কুচিয়া মাছের চাষ বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। বগুড়ার সান্তাহারে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপকেন্দ্রে প্রাকৃতিক উপায়ে কুচিয়া মাছের প্রজনন বাড়ানো নিয়ে গবেষণা চলছে।
কুচিয়া মাছ শিকারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বগুড়ার কাহালু, শিবগঞ্জ, আদমদীঘি এবং গাবতলী উপজেলার বিভিন্ন খাল বিলে এখনো কুচিয়া মাছ পাওয়া যায়। এই মাছ সাধারণত নরম মাটির গভীর গর্তে বসবাস করায় সহজে কারো নজরে আসে না। তাছাড়া এ অঞ্চলের মানুষ কুচিয়া মাছ না খাওয়ার কারণে হাট-বাজারে বিক্রিও হয় না।
শিবগঞ্জ উপজেলার সুরাইল গ্রামের কুচিয়া মাছ শিকারি রণজিৎ প্রাং, শচীন প্রাং ও উজ্জ্বল প্রাং বার্তা২৪.কমকে জানান, তাদের গ্রামের আরও বেশ কয়েকজন কুচিয়া মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। সারাদিন খাল-বিল, মজা পুকুর, জমির আইল দিয়ে ঘুরে তারা প্রত্যেকে গড়ে ২-৩ কেজি কুচিয়া মাছ শিকার করে। সন্ধ্যার পরে শিকার করা মাছ নিয়ে আসে বগুড়া শহরের তিন মাথা রেলগেট এলাকায় কুচিয়া মাছের আড়তে। ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে সেই টাকায় তাদের সংসার চলে। তবে বর্ষাকালে প্রত্যেকে ৫ থেকে ৭ কেজি কুচিয়া মাছ শিকার করে থাকেন।
বগুড়া শহরের তিনমাথা রেলগেট এলাকায় অবস্থিত খোকন কুচিয়া মাছ আড়তের মালিক গোবিন্দ চন্দ্র দাস বার্তা২৪.কমকে জানান, প্রতি রাতেই ৭০-৮০ কেজি কুচিয়া মাছ তার আড়ত থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। এছাড়াও বগুড়ার শাজাহানপুর ও শেরপুরে আরও আড়ত রয়েছে। সেখান থেকেও কুচিয়া মাছ প্রতি রাতেই ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। তবে বর্ষাকালে মাছের পরিমাণ বেশি হয়।
তিনি আরও জানান, চীন ও থাইল্যান্ডে কুচিয়া মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে ২৫০ গ্রাম ওজনের ছোট সাইজের কুচিয়া মাছের চাহিদা ও দাম বেশি।
ঢাকার তুরাগ এলাকার এমভি এন্টারপ্রাইজের মালিক বাবুল সরদার বার্তা২৪.কমকে জানান, তিনি প্রতি সপ্তাহে ৫ থেকে ৭শ কেজি কুচিয়া মাছ চীন এবং থাইল্যান্ডে রপ্তানি করেন। বাণিজ্যিকভাবে কুচিয়া মাছের চাষ বাড়াতে পারলে আরও বেশি পরিমাণে রপ্তানি করে অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
বগুড়ার সান্তাহারে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.ডেভিট রিন্টু দাস বার্তা২৪.কমকে জানান, সরকার কুচিয়া মাছ চাষের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে। বর্তমানে প্রতি মাসে চীন এবং থাইল্যান্ডে ১০০ টনের বেশি কুচিয়া মাছ রপ্তানি হচ্ছে।
বগুড়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রওশন আরা বেগম বার্তা২৪.কমকে জানান, বগুড়ার কাহালু এবং আদমদীঘিতে কুচিয়া মাছ চাষ করা হয়। কেউ আগ্রহী হলে মৎস্য বিভাগ থেকে তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে।