পাবনার সুজানগরে কারখানার বর্জ্যে দুর্বিষহ জীবন, চাষাবাদের ক্ষতি

, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, পাবনা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 07:05:31

পাবনার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের কাঁচুরীতে আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠা অবৈধ কারখানার দূষিত বর্জ্যে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। এছাড়া কেমিক্যাল মিশ্রিত বিষাক্ত পানিতে কৃষিজমি উর্বরতা হারাচ্ছে। রঙের কেমিক্যাল মিশ্রিত পানির পচা গন্ধে মশা-মাছির উৎপাত বেড়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, সরকারি জায়গায় অনুমতি ছাড়াই মামা-ভাগ্নে প্রসেজিং অ্যান্ড ডাইং শীর্ষক প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য দূষণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে কাঁচুরী গ্রামের ভুক্তভোগী জনসাধারণ প্রতিকার পাওয়ার আশায় গত ২১ মার্চ জেলা প্রশাসক ও সুজানগর উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ওই গ্রামের মৃত আব্দুস ছামাদ খানের ছেলে শাহীন হোসেন খান, স্থানীয় জনগণের নিষেধ না মেনে পেশি শক্তির প্রভাব খাটিয়ে আবাসিক এলাকায় ও সরকারি পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় সরকারের বিনা অনুমতিতে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে মামা-ভাগ্নে প্রসেসিং অ্যান্ড ডাইং একই ব্যক্তি দুটি কারখানা পরিচালনা করে আসছে। সুতা প্রসেজিংয়ের দু’টি কারখানা। যদিও দু’টি কারখানার ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। অপরটি মাছ চাষের নামে লিজ গ্রহণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গার উপরে কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। কারখানা দু’টি কাঁচুরী গ্রামে গড়ে ওঠার পর থেকে কারখানার কেমিক্যাল বর্জ্য পদার্থের সাথে মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়ালে এবং এলাকায় তা নিয়ে প্রতিবাদ করলে তাদেরই ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। পাশাপাশি কারখানার মালিক পক্ষ থেকে বাড়ি উচ্ছেদ করে অন্যত্র চলে যাওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি শামীম হোসেন বলেন, পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, এটা আমিও জানি। আমার কাছে এলাকার মানুষ এ নিয়ে বহুবার বাদী হয়েছে। তারা অভিযোগ করেছে, কিন্তু আমি তাদের বলেছি, আপনারা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেন, কারণ আমার ক্ষমতা সীমিত।

স্থানীয় ভুক্তভোগী আব্দুল লতিফ খান বলেন, কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যালের গন্ধে বাড়িতে বসবাস করা দায়। রাস্তাঘাটে চলাচল করাও অসুবিধা, সর্বোপরি মশার উপদ্রব। আমি মনে করি, মিলটি প্রশাসনের সহায়তায় অতি জরুরি ভিত্তিতে অপসারণ করা দরকার।

স্থানীয় কৃষক বিল্লাল সেখ বলেন, শাহীন হোসেনের কেমিক্যালের বিষাক্ত পানি আমার ইরি ধানের ক্ষেতে ঢুকে পড়ে। ধীরে ধীরে আমার ক্ষেতের উর্বরতা শক্তি হারিয়ে যায়। বর্তমানে ক্ষেতে আর কোনো ফসল উৎপাদন করতে পারি না। একই অবস্থা বিরাজ করছে পাশের একটি পিয়াজের ক্ষেতে। কারখানাটি অপসারণ না করা গেলে ধীরে ধীরে ফসলের বহু ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাবে। অচিরেই হারিয়ে যাবে উর্বর ক্ষমতা।

স্থানীয় দুই বৃদ্ধা বলেন, রান্নার সময়, শোবার সময়, গরম ভাত খাবার সময়; এমনকি ঘুমের ভেতর, এভাবেই ২৪ ঘণ্টাজুড়ে মনে হয় কেমিক্যাল খাচ্ছি। এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়! দেখারও কি কেউ নেই!

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রসেসিং অ্যান্ড ডাইংয়ের মালিক শাহীন হোসেন খান বলেন, এ ধরনের কারখানা চালাতে যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিতে হয়, তা আমার জানান নেই। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছি মাত্র। তাছাড়া, আমার কারখানার বর্জ্যে যে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে তাও আমি জানি না। খোঁজ খবর নিয়ে এসব ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।

জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন জানান, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর