চুয়াডাঙ্গার জয়রামপুরে গত দুই বছর আগে আজকের দিনে (২৬ মার্চ) এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। ওই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায় একই গ্রামের ১৩ জন শ্রমিক। গুরুতর আহত হয় আরও ১২ জন। তবে এ ঘটনার দুই বছর পার হলেও স্বজন হারানোর ক্ষত আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি নিহতদের পরিবারগুলো। আর আহত অধিকাংশ শ্রমিক অক্ষমতার কারণে এখন ঘরে বসে দিন কাটাচ্ছে।
এ ঘটনায় ওইদিনই পুলিশ বাদী হয়ে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করে। এতে আসামি করা হয় ঘাতক ট্রাকের চালক ও সহকারীকে। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ তখনো ভোর হতে অনেকটা সময় বাকি। গ্রামের ২৫ জন দিনমজুর প্রতিদিনের মতো সেদিনও বের হয়েছিল নিজেদের কাজের সন্ধানে। খেটে খাওয়া এসব নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর উদ্দেশ্য ছিল কাজে যোগ দিয়ে অর্থ উপার্জন করে দু’মুঠো অন্নের ব্যবস্থা করার। স্বপ্ন ছিল নিজের পরিবারের সঙ্গে খেয়ে-পরে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার। কিন্তু একটি সড়ক দুর্ঘটনা ভেঙে ফেলে ১৩টি পরিবারের স্বপ্ন।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর এলাকায় ট্রাক ও ভটভটির মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারায় বড়বলদিয়া গ্রামের ১৩ জন নির্মাণ শ্রমিক।
এদিকে দুই বছর পার হলেও সেদিনের সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে শিউরে ওঠেন আহতদের অনেকে। আহতদের অধিকাংশ এখনো হয়ে ওঠেনি পুরোপুরি সুস্থ। পঙ্গুত্ব জীবন নিয়ে ঘরে বসেই দিন কাটছে তাদের।
সেদিনের দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া বড়বলদিয়ার আলতাব মিয়া জানান, আজও তার চোখে ভেসে ওঠে সেই দৃশ্য। চারিদিকে শুধু রক্ত আর রক্ত। আলতাব মিয়ার পুরো শরীরে আজও সেই দুর্ঘটনার চিহ্ন দেখা যায়।
একই গ্রামের দিনমজুর গাজী মিয়া সেদিনের সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে গেলেও মারা যায় তার প্রিয় সন্তান শান্ত। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, দুর্ঘটনার সময় হঠাৎ একটি বিকট শব্দ শোনেন এবং রাস্তায় ছিটকে পড়েন। এরপর আর কিছুই তার মনে নেই। ১৯ দিন পর বাড়ি ফিরে শোনেন তার ছেলে ওই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা গেছে।
এদিকে দুর্ঘটনার পর নিহত ও আহতদের পরিবারের মাঝে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আর্থিক অনুদান দিলেও তা যথেষ্ট নয় বলে জানান ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত পরিবারের সদস্যরা যেন সুন্দর স্বাভাবিক ভাবে জীবনযাপন করতে পারে সেজন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য সহ সমাজের দানশীল ব্যক্তিদের কাছে আর্থিক সাহায্যের দাবি করেছে এলাকাবাসী।