বগুড়ার শেরপুর উপজেলার খেরুয়া মসজিদ ৪৩৭ বছরের পুরাতন প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন। ১৫৮২ সালে সুলতানী ও মুঘল স্থাপত্য শৈলীর সমন্বয়ে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এখনো মসজিদটিতে নিয়মিত নামাজ আদায় করেন স্থানীয় মুসল্লীরা।
ঈদের নামাজও আদায় করা হচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরে। এছাড়া প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ মসজিদটি দেখতে আসেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বগুড়া শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুর পৌর শহরের খন্দকার টোলায় খেরুয়া মসজিদের অবস্থান। ১৫৮২ সালের জানুয়ারি মাসের কোনো এক মঙ্গলবারে ওই এলাকার জমিদার জওহর আলী কাকশালের ছেলে মীর্জা মুরাদখান কাকশাল মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মসজিদের সম্মুখভাগের দেয়ালে কাল পাথরে খোদাই করে লেখা হরফগুলো দর্শকদের সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
ইট ও চুন-সুরকি দিয়ে গাঁথুনি ছাড়াও মসজিদটি নির্মাণে কালো পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। চার কোনায় চারটি চূড়া ছাড়াও শীর্ষভাগে তিনটি গম্বুজ আছে। মসজিদটির উত্তর-দক্ষিণ পাশের মাঝখানে দুইটি এবং পূর্ব পাশে তিনটি প্রবেশ পথ আছে। প্রবেশপথগুলোতে কখনোই দরজা ছিল না। জানলাবিহীন এই মসজিদের প্রবেশ দ্বারের ডান পাশের একটি শিলালিপি অনেক আগেই পাকিস্তানের করাচি জাদুঘরে স্থানান্তর করা হয়। বাম পাশের লিপিটি এখনো অক্ষত রয়েছে।
শেরপুরের ইতিহাস নিয়ে অধ্যক্ষ রুস্তম আলীর লেখা বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, কথিত আছে- দুটি পায়রা মসজিদের জিম্মাদার ফকির আব্দুস সামাদের কাছে এসে অলৌকিক বাণীতে আশ্রয় প্রার্থনা করে। এ কারণে মসজিদের কার্নিশে পায়রার জন্য ছোট ছোট কক্ষ নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে পায়রাগুলোকে শাজাহাদপুরের ঐতিহাসিক মসজিদে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সেখানে পাখির বাসা রয়েছে। বহু বছর পরিত্যক্ত থাকার পর আনুমানিক আড়াইশ বছর আগে মসজিদটির সংস্কার করা হয় এবং তখন থেকেই মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করা হচ্ছে।
আরও জানা গেছে, বর্তমানে মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে রক্ষাণাবেক্ষণ করা হয়। সংস্কারের সময় মসজিদের মাঠে একটি কবরের চিহ্ন পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, কবরটি মসজিদের জিম্মাদার ফকির আব্দুস সামাদের। সেই থেকেই কবরটি সংরক্ষণ করা হয়।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে মসজিদ দেখতে আসা গোলাম মোস্তফা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘লোকমুখে মসজিদের অনেক অলৌকিক গল্প শুনেছি। এখানে কাজে আসার সুযোগে মসজিদটি দেখতে আসলাম।’
মসজিদের কেয়ারটেকার আব্দুস সামাদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মসজিদের ভেতর একসঙ্গে ৯০ জন নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে জুমার দিন মানুষ বেশি হওয়ায় মাঠে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া প্রতিদিন গড়ে ২০-৩০ জন দর্শণার্থী এখানে আসেন। যাদের নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ রাখা হয়।’