ময়মনসিংহের গৌরীপুর রেলস্টেশনে সরকারি পুকুরের ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ৫৪ বছরের পুরোনো রেলওয়ে কবরস্থান। পুকুরের ভাঙনে গত একযুগে অর্ধশতাধিক কবর বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানীয় রেলওয়ে বাসিন্দাদের অভিযোগ, বর্ষার বৃষ্টি ও পুকুরের পানির স্রোতের ভাঙনে প্রিয়জনদের শেষ স্মৃতিচিহ্ন কবর বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভাঙন রোধে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের একাধিকবার জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
স্থানীয় ও রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে গৌরীপুর রেলস্টেশনের পশ্চিম পাশে পুকুরের পাড় ঘেঁষে প্রায় ৭ কাঠা জমি নিয়ে রেলওয়ে কবরস্থান নির্ধারণ করা হয়। গৌরীপুর রেলস্টেশনে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কারো মৃত্যু হলে ওই কবরস্থানে তাদের সমাহিত করা হয়। পাশাপাশি বেওয়ারিশ লাশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদেরও এখানে সমাহিত করা হয়।
কিন্তু সীমানা প্রাচীর না থাকা ও প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কবরস্থান তৈরি হওয়ার পর থেকেই পুকুরের পানিতে এর জমি বিলীন হচ্ছে। ইতোমধ্যে কবরস্থানের প্রায় ৩ কাঠা জমি পুকুরে বিলীন হয়ে গেছে। ২০১৭ সালে কবরস্থান সংস্কারের নামে শুধুমাত্র একটি গেট নির্মাণ করে কাজ শেষ করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে কবরস্থানের জমি ভরাট কিংবা সীমনা প্রাচীর নির্মাণে কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমানে কবরস্থানের প্রায় ত্রিশটির অধিক কবর পুকুরে বিলীন হওয়ার হুমকিতে আছে।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকালে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, রেলওয়ের বিশাল পুকুরের এক কোণে অবস্থিত কবরস্থানের মাটি ভেঙে ভেঙে পুকুরে পড়ছে। কবরস্থানের অনেক গাছ পুকুরে বিলীন হয়ে গেছে। আগাছা-পরগাছা জন্মে কবরস্থানে জঞ্জাল তৈরি হয়েছে। খসে পড়ছে কবরের মাটি। পুকুরের পূর্বপাড়ের কোণে একটি মৃত গাছের শিকড় পাকা একটি কবরের নিচে ঢুকে মাটি সরিয়ে ফেলেছে। ওই গাছটি যেকোনো সময় পাকা কবরটি নিয়ে পুকুরে বিলীন হতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দা নূর কাশেম বলেন, ‘আমার ভাই ও বোনকে এই কবরস্থানে দাফন করা হয়েছিল। কিন্তু পুকুর তাদের কবর গিলে খেয়েছে। এখন অন্যান্য প্রিয়জনদের কবর গিলে খাওয়ার অপেক্ষায় আছে পুকুরটি। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কবরস্থান সংস্কার কিংবা রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।’
অপর বাসিন্দা মিলন খান বলেন, ‘আমার বাবা রেলস্টেশনে চাকরি করত। বাবার মৃত্যুর পর তাকে এখানে দাফন করা হয়। এখনো আমার পরিবারের সদস্যরা বাবার কবরটা জিয়ারত করতে পারে। কিন্তু পুকুর যেভাবে ভাঙছে তাতে মনে হয় আসছে বর্ষায় আমার বাবার কবরটিও বিলীন হয়ে যেতে পারে। তখন আর এখানে এসে বাবার কবরটা জিয়ারত করতে পারব না।’
এ বিষয়ে গৌরীপুর রেলস্টেশনের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রেলস্টেশনের বাসিন্দারা কবরস্থানটি সংস্কারের জন্য আমাকে জানিয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় আমাদের পক্ষে সংস্কার করা সম্ভব না। তবে সবাই যদি মিলেমিশে কবরস্থান সংস্কারের উদ্যোগ নেয়, তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছু করার চেষ্টা করব।’