এমন একটা সময় ছিল যখন নারীদের ঘর থেকে বের হতে নানান বিধি-নিষেধ থাকত। আর গ্রামীণ নারীদের জীবনচিত্র তো ছিল আরও শৃঙ্খলবদ্ধ। বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা আর কুসংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল তাদের জীবনযাত্রা।
কালের আবর্তনে সময় পাল্টে গেছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ শহরের নারীদের পাশাপাশি দুর্বার গতিতে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ নারীরাও। পুরুষের পাশাপাশি আজ গ্রামীণ নারীরা এখন স্বাবলম্বী হতে ঘর থেকে বের হচ্ছেন। এমনই চিত্র দেখা গেছে রাজবাড়ীর নারীদের ক্ষেত্রে। নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার আসায় তারা ভিড় জমাচ্ছেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অধিদফতরে।
সরেজমিনে বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় দেড় শতাধিক নারী মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের অধীনে তিন মাসব্যাপী আধুনিক দর্জি বিজ্ঞান, বিউটিফিকেশন ও টেইলারি প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য মৌখিক পরীক্ষা দিতে অপেক্ষা করছেন। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গৃহিণীরা আবেদন করেছেন প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য।
বার্তা২৪.কম-এর এই প্রতিনিধির সাথে কথা হয় বালিয়াকান্দি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রেশমা, সুমাইয়া ও আছিয়ার সাথে। তারা জানান, যদি এই প্রশিক্ষণের মৌখিক পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে টিকে যান তাহলে পড়ালেখার পাশাপাশি তারা বিভিন্ন হাতের কাজ শিখবেন।
বিশেষ করে বিউটিফিকেশনে টিকলে তারা ভবিষতে বিউটি পার্লার দিয়ে নিজেরা স্বাবলম্বী হবেন। এ সময় তারা আরও জানান, লেখাপড়া শেষ করে চাকরি পাবেন কিনা নিশ্চিত না। তাই চাকরির পেছনে না দৌড়ে তারা নিজেরাই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন।
রেখা মণ্ডল নামের প্রশিক্ষনার্থী জানান, তিনি পেশায় গৃহিণী। তার স্বামী একটি এনজিওতে চাকরি করতেন, এখন অবসরে আছেন। তার সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এখন আর ঘরে বসে থাকবেন না, একটা কিছু করে তাকে সংসার চালাবেন। তাই টেইলার্সের প্রশিক্ষণ নিতে চান রেখা। প্রশিক্ষণ শেষে গ্রামে একটি দোকান দিয়ে পোশাক তৈরি করে আয় করতে চান।
বালিয়াকান্দি উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তহমিদা খানম বলেন, ‘কিছুদিন আগেও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নারীদেরকে পেতাম না। আর এখন চাহিদার থেকেও বেশি নারী আবেদন করেন। এখন মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে তারপর চূড়ান্ত তালিকা করি। যারা চুড়ান্ত তালিকায় টিকবেন তারা মাসে ২০ কর্মদিবস হিসেবে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে তিন মাসে ছয় হাজার টাকা পাবেন।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মাসুম রেজা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের উন্নয়নে বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের আত্ম-কর্মসংস্থানের ব্যাপারে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় এই উপজেলাতে আধুনিক দর্জি বিজ্ঞান, বিউটিফিকেশন ও টেইলারি প্রশিক্ষণের জন্য আগ্রহী নারীদের কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হয়। ৭০ জন প্রশিক্ষণার্থীর বিপরীতে ১২০ জন নারী আবেদন করেছেন। গ্রামীণ নারীরা এখন আর তারা ঘরে বসে থাকতে চান না, নিজের কর্ম নিজেরাই করতে চান।’