দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা ঝিনাইদহ। আর কুষ্টিয়া-মাগুরা ও রাজবাড়ী সীমান্তে অবস্থিত ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা। স্বাধীনতার পর থেকে ঝগড়াপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত শৈলকুপা। এখানে যেমন শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বেশি তেমনি আবেগপ্রবণ ও আত্মহত্যার সংখ্যাও বেশি। গত ১০ বছরে ঝগড়াপ্রবণ এলাকার দুর্নাম কিছুটা ঘুচলেও রাজনৈতিক কোন্দলে আবারও সরূপে ফিরেছে শৈলকুপা।
জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুরোনো চেহারায় ফিরেছে এলাকার মানুষ। নির্বাচনের আগে ও পরের সহিংসতা কমানো যাচ্ছে না। তীব্র হয়েছে আওয়ামী লীগের আন্তঃকোন্দল। এখানে আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগই। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নায়েব আলী জোয়াদ্দার দলের মনোনয়ন পান। তবে তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিকদার মোশাররফ হোসেন সোনা। যে কারণে দলের নেতাকর্মীরা দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়। শুরু হয় স্থানীয় নেতা কর্মীদের মধ্যে রেশারেশি ও শত্রুতা।
আরও জানা গেছে, দলের উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আরিফ মন্নু নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে সমর্থন করেন। তার সাথে ছিলেন শৈলকুপা পৌর কমিটির সভাপতি ও পৌর মেয়র কাজী আশরাফুল আজম। এছাড়া ছাত্রলীগ, যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ ও মহিলা লীগের নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রচারণা শুরু করেন। তবে বিদ্রোহী প্রার্থী শিকদার মোশাররফ হোসেন সোনা নির্বাচনে বিজয়ী হন। এরপর শুরু হয় প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামরা, ভাঙচুর ও মারপিট।
অভিযোগ আছে, ভোটের দিন রাতেই দোহা নাগিরাট গ্রামে নৌকা সমর্থক তিন জনের বাড়িতে হামলা চালায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা। এছাড়াও বগুড়া গ্রামে নৌকা সমর্থক আবু মিয়ার বাড়িতে হামলা, পাঁচপাখিয়া গ্রামে পাঁচটি বাড়িতে হামলা, ২৫ মার্চ গবিন্দপুর গ্রামে নৌকা সমর্থক তিনটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে এক শিশুসহ পাঁচ জনকে হাতুড়ি পেটা করে আহত করা, একই দিন উপজেলার ধর্মপাড়া গ্রামে নৌকা সমর্থকদের ১০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। তুলে নেওয়া হয় মাঠের ফসল। আর ২৬ মার্চ রুপদা গ্রামে নৌকা সমর্থক পাঁচজনকে কুপিয়ে আহত কর হয়। ২৭ মার্চ ভুলুন্দিয়া গ্রামে নিয়ামত আলীকে পিটিয়ে আহত করে আনারস প্রতীকের সমর্থকরা। ২৯ মার্চ রাতে তার বাড়ি থেকে একটি ছাগল চুরি করে ভুড়িভোজ করা হয়। উপজেলার পুটিমারি গ্রামেও কয়েকজনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়।
ধর্মপাড়া গ্রামের টেন্টু, লিটন, কোবাদ আলী জানান, ভোটের দিন রাত থেকেই তাদের ওপর অত্যাচার শুরু হয়। এমনকি প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীরা মাঠের ফসলও তুলতে দিচ্ছে না।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রুপদা গ্রামে কাজী তোয়াজ উদ্দীন অভিযোগ করে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নৌকায় ভোট দেওয়ায় আনারস সমর্থকরা পরিবারের সবাইকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে।’
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) নেতা আবু তাহের বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে ও পরে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হামলার ও ভাঙচুরের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাদের এক জায়গায় বসে সমস্যার সমাধান করা উচিৎ। তা না হলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সহিংসতা বন্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। যারা হামলা-ভাঙচুরের সাথে জড়িত তাদের কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে হাটফাজিল বাজারে সহিংসতা রোধে বিশেষ সভা করা হয়েছে। সেখানে যারা সহিংসতার সাথে জড়িত তাদের কঠোর হুঁশিয়ারী দেওয়া হয়।’