একটু এদিক সেদিক হলেই যেখানে মৃত্যু নিশ্চিত, সেখানে খালি হাতে প্রধান লাইন থেকে শত শত ভোল্ট বিদ্যুৎ শরীরে সঞ্চালিত করে খেলা দেখান আয়নাল মিয়া। তবে এলাকাবাসী তাকে এই নামে খুব বেশি চেনেন না। সবাই তাকে ‘বিদ্যুৎমানব আয়নাল’ বলেই ডাকেন।
‘বিদ্যুৎমানব’ আয়নালের বাড়ি হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা সদরের দোকানটোলা গ্রামে। বিদ্যুৎ নিয়ে নিজের ভয়ংকর সব খেলা দেখিয়ে এলাকাবাসীর কাছে এই নামে পরিচিত হয়ে উঠেছেন তিনি। স্ত্রী, চার মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে তার সংসার।
বার্তা২৪ -এর সাথে কথা হয় আয়নাল মিয়ার। আলাপচারিতায় তিনি তুলে ধরেন তার ‘বিদ্যুৎমানব’ হয়ে ওঠার গল্প।
আয়নাল মিয়া বলেন, ২০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি ইলেক্ট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন। এক সময় তিনি বুঝতে পারেন বিদ্যুতের স্পর্শে তার কোনো ক্ষতি হয় না। বর্তমানে টেষ্টার কিংবা গ্লাভস ছাড়াই স্থানীয় বাসা-বাড়িতে বিদ্যুতের কাজ করে আসছেন তিনি।
এমনকি, বিদ্যুতের তার (ক্যাবল) ধরে নিজের শরীরে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করে দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালানো ও ডিম সিদ্ধ করে খেলাও দেখান তিনি। বৈদ্যুতিক খুঁটিতে থাকা ২২০ কিংবা ৪৪০ ভোল্টের প্রধান (মেইন) লাইনের নেগেটিভ-পজেটিভ ক্যাবলে দুই হাত দিয়ে ধরে বাতি জ্বালানোর মতো ভয়ংকর কাজ করে দেখানোর রেকর্ডও আছে তার! এ পেশায় তিনি কাজ করে অনেক দুর্ঘটনা থেকে নিজের কর্মগুণে বহু মানুষকে বিপদমুক্তও করেছেন।
তার ভয়ঙ্কর এসব কীর্তিকলাপ দেখে এলাকাবাসী। হবেই বা না কেন! যে কাজ করা একেবারে অসম্ভব, সে কাজ কীভাবে আয়নাল মিয়া করেন, তা স্বচক্ষে দেখে খোদ বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলীরা পর্যন্ত বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন।
তবে ছয় সন্তানের জনক আয়নাল মিয়া মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে এ কাজ আর করতে চান না। তাই স্ত্রী সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য হতদরিদ্র এই মানুষটি সরকারি সহযোগিতা কামনা করছেন।
আয়নাল মিয়া জানান, ২০১৬ সালের ১২ মার্চ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেছিলেন। আবেদনে হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু জাহিরের সুপারিশ ছিল। তবুও কোনো সাড়া পাননি।
তার প্রতিবেশী মোতাহের মিয়া বলেন, ‘আয়নাল ছোটবেলা থেকেই খুব ভালো ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইলেক্ট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন। ফলে তিনি এই অবাক শক্তির অধিকারী হয়েছেন। প্রায় সময়ই তিনি বিদ্যুতের মেইন লাইন ধরে খেলা দেখান।’
তাঁর ব্যাপারে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এমন চেষ্টা কেউ করলে নির্ঘাত মারা যাবে। আয়নাল মিয়াকে এসব কর্মকাণ্ড থেকে ফেরাতে তার জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’
বানিয়াচং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আয়নাল মিয়ার ঘটনা বিরল। অতীতে একজনকে শুধু এক ফেজে হাত দিয়ে শরীরে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করে টেস্টার জ্বালাতে দেখেছি, কিন্তু আয়নাল মিয়া যেভাবে দুই ফেজে ধরে নিজের শরীরে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করে এবং তাও আবার ২২০ ও ৪৪০ ভোল্টের মেইন লাইনে! এটা কীভাবে করে তা ভেবে পাই না।’